মানুষের সেবা
হাশরের দিন
বলিবেন খোদা-
হে আদম
সন্তান
তুমি মোরে
সেবা কর
নাই যবে
ছিনু রোগে
অজ্ঞান।
মানুষ বলিবে
- তুমি প্রভু
করতার,
আমরা কেমনে
লইব তোমার
পরিচর্যার ভার?
বলিবেন খোদা-
দেখনি মানুষ
কেঁদেছে রোগের
ঘোরে,
তারি শুশ্রুষা
করিলে তুমি
যে সেথায়
পাইতে মোরে।
খোদা বলিবেন-
হে আদম
সন্তান,
আমি চেয়েছিনু
ক্ষুধায় অন্ন,
তুমি কর
নাই দান।
মানুষ বলিবে-
তুমি জগতের
প্রভু,
আমরা কেমনে
খাওয়াব তোমারে,
সে কাজ
কি হয়
কভু?
বলিবেন খোদা-
ক্ষুধিত বান্দা
গিয়েছিল তব
দ্বারে,
মোর কাছে
তুমি ফিরে
পেতে তাহা
যদি খাওয়াইতে
তারে।
পুনরপি খোদা
বলিবেন- শোন
হে আদম
সন্তান,
পিপাসিত হয়ে
গিয়েছিনু আমি,
করাও নি
জল পান।
মানুষ বলিবে-
তুমি জগতের
স্বামী,
তোমারে কেমনে
পিয়াইব বারি,
অধম বান্দা
আমি?
বলিবেন খোদা-
তৃষ্ণার্ত তোমা ডেকেছিল জল আশে,
তারে যদি
জল দিতে
তুমি তাহা
পাইতে আমায়
পাশে।
জীবনানন্দ দাশ
আবার আসিব
ফিরে
আবার আসিব
ফিরে ধানসিঁড়িটির
তীরে-এই
বাংলায়
হয়তো মানুষ
নয় হয়তো
বা শঙ্খচিল
শালিকের বেশে
হয়তো ভোরের
কাক হয়ে
এই কার্তিকের
নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে
ভেসে একদিন
আসিব এ
কাঁঠাল-ছায়ায়;
হয়তো বা
হাঁস হব-
কিশোরীর-ঘুঙুর
রহিবে লাল
পায়,
সারা দিন
কেটে যাবে
কলমির গন্ধ
ভরা জলে
ভেসে ভেসে;
আবার আসিব
আমি বাংরার
নদী মাঠ
ক্ষেত ভালবেসে
জলাঙ্গীর ঢেউয়ে
ভেজা বাংরার
এ সবুজ
করুণ ডাঙায়;
হুমায়ুন কবির
মেঘনায় ঢল
শোন্ মা
আমিনা, রেখে
দে রে
কাজ ত্বরা
করি মাঠে
চল,
এল মেঘনায়
জোয়ারের বেলা
এখনি নামিবে
ঢল।
নদীর কিনার
ঘন ঘাসে
ভরা
মাঠ থেকে
গরু নিয়ে
আয় ত্বরা
করিস না
দেরি- আসিয়া
পড়িবে সহসা
অথই জল
মাঠ থেকে
গরু নিয়ে
আয় ত্বরা
মেঘনায় নামে
ঢল।
এখনো যে
মেয়ে আসে
নাই ফিরে-
দুপুর যে
বয়ে যায়।
ভরা জোয়ারের
মেঘনার জল
কূলে কূলে
উছলায়।
নদীর কিনার
জলে একাকার,
যেদিকে তাকাই
অথই পাথার,
দেখতো গোহালে
গরুগুলি রেখে
গিয়েছে কি
ও পাড়ায়?
এখনো ফিরিয়া
আসে নাই
সে কি?
দুপুর যে
বয়ে যায়।
ভরবেলা গেলো,
ভাটা পড়ে
আসে, আঁধার
জমিছে আসি,
এখনো তবুও
এলো না
ফিরিয়া আমিনা
সর্বনাশী।
দেখ্ দেখ্
দূরে মাঝ-দরিয়ায়,
কাল চুল
যেন ঐ
দেখা যায়-
কাহার শাড়ির
আঁচল-আভাস
সহসা উঠিছে
ভাসি?
আমিনারে মোর
নিল কি
টানিয়া মেঘনা
সর্বনাশী।
বন্দে আলী মিঞা
আমাদের গ্রাম
আমাদের ছোটো
গাঁয়ে ছোটো
ছোটো ঘর
থাকি সেথা
সবে মিলে
কেহ নাহি
পর।
পাড়ার সকল
ছেলে মোরা
ভাই ভাই
একসাথে খেলি
আর পাঠশালে
যাই।
হিংসা ও
মারামারি কভু
নাহি করি,
পিতা-মাতা
গুরুজনে সদা
মোরা ডরি।
আমাদের ছোটো
গ্রামে মায়ের
সমান,
আলো দিয়ে
বায়ু দিয়ে
বাঁচাইছে প্রাণ।
মাঠভরা ধান
আর জলভরা
দিঘি,
চাঁদের কিরণ
লেগে করে
ঝিকিমিকি।
আমগাছ জামগাছ
বাঁশ ঝাড়
যেন,
মিলে মিশে
আছে ওরা
আত্মীয় হেন।
সকালে সোনার
রবি পূব
দিকে ওঠে
পাখি ডাকে,
বায়ু বয়,
নানা ফুল
ফোটে।
বুদ্ধদেব বসু
নদী-স্বপ্ন
কোথায় চলেছো?
এদিকে এসো
না! দুটো
কথা শোনা
দিকি
এই নাও-
এই চকচকে
ছোটো, নুতন
রূপোর সিকি
ছোকানুর কাছে
দুটো আনি
আছে, তোমারে
দেবো গো
তা-ও,
আমাদের যদি
তোমার সঙ্গে
নৌকায় তুলে
নাও।
নৌকা তোমার
ঘাটে বাঁধা
আছে- যাবে
কি অনেক
দূরে?
পায়ে পড়ি,
মাঝি, সাথে
নিয়ে চলো
মোরে আর
ছোকানুরে
আমারে চেনো
না? মোর
নাম খোকা,
ছোকানু আমার
বোন
তোমার সঙ্গে
বেড়াবো আমরা
মেঘনা-পদ্মা-শোন।
দিদি মোরে
ডাকে গোবিন্দচাঁদ,
মা ডাকে
চাঁদের আলো,
মাথা খাও,
মাঝি, কথা
রাখো! তুমি
লক্ষী, মিষ্টি,
ভালো!
বাবা বলেছেন,
বড় হয়ে
আমি হব
বাঙলার লাট,
তখন তোমাকে
দিয়ে দেব
মোর ছেলেবেলাকার
খাট।
চুপি-চুপি
বলি, ঘুমিয়ে
আছে মা,
দিদি গেছে
ইস্কুলে,
এই ফাঁকে
মোরে-আর
ছোকানুরে- নৌকোয়া লও তুলে।
কোন ভয়
নেই – বাবার
বকুনি তোমাকে
হবে না
খেতে
যত দোষ
সব, আমার-
না, আমি
একা ল'ব মাথা
পেতে।
নৌকো তোমার
ডুবে যাবে
নাকো, মোরা
বেশি ভারি
নই,
কিচ্ছু জিনিস
নেবো না
সঙ্গে কেবল
ঝন্টু বই।
চমকালে কেন!
ঝন্টু পুতুল,
ঝন্টু মানুষ
নয়,
একা ফেলে
গেলে, ছোকানুরে
ভেবে কাঁদিবে
নিশ্চয়।
অনেক রঙের
পাল আছে,
মাঝি? বাদামী?
সোনালী? লাল?
সবুজও? তা
হলে সেটা
দাও আজ,
সোনালীটা দিয়ো
কাল।
সবগুলো নদী
দেখাবে কিন্তু। আগে চলো পদ্মায়,
দুপুরের রোদে
রূপো ঝলমল
সাদা জল
উছলায়
শুয়ে' শুয়ে'
- মোরা দেখিব
আকাশ- আকাশ
ম-স্ত
বড়,
পৃথিবীর যত
নীল রঙ-
সব সেখানে
করেছে জড়।
মায়ের পূজোর
ঘরটির মত,
একটু ময়লা
নাই,
আকাশেরে কে
যে ধোয়
বারবার, তুমি
কি জানো
তা ভাই?
কালো-কালো
পাখি বাঁকা
ঝাঁক বেঁধে
উড়ে চলে
যায় দূরে,
উঁচু থেকে
ওরা দেখিতে
কি পায়
মোরে আর
ছোকানুরে?
রূপোর নদীতে
রূপোর ইলিশ-
চোখ ঝলসানো
আঁশ,
ওখানে দ্যাখো
না- জালে
বেঁধে জেলে
তুলিয়াছে একরাশ।
ওটা চর
বুঝি? একটু
রাখো না,
এ তো
ভারি সুন্দর।
এ যেন
নতুন কার্পেট
বোনা! এই
পদ্মার চর?
ছোকানু, চল
রে, চান
ক'রে
আসি দিয়ে
সাত-শোটা
ডুব,
ঝাঁপায়ে-দাপায়ে
টলটলে জলে
নাইতে ফুর্তি
খুব।
ইলিশ কিনলে?
আঃ, বেশ
বে তুমি
খুব ভালো,
মাঝি
উনুন ধরাও
ছোকানু দেখাবে
রান্নার কারসাজি।
খাওয়া হ'লো শেষ-
আবার চলেছি,
দুলছে ছোট্ট
নাও,
হাল্কা নরম
হাওয়ায় তোমার
লাল পাল
তুলে দাও।
আমর দু'জন দেখি
ব'সে
ব'সে
আকাশ কত
না নীল,
ছোট পাখি
আরো ছোট
হ'য়ে
যায়- আকাশের
মুখে তিল
সারাদিন গোলা,
সূর্য লুকালো
জলের তলার
ঘরে,
সোনা হ'য়ে জ্বলে
পদ্মার জল
কালো হ'লো তার
পরে।
সন্ধ্যার বুকে
তারা ফুটে
ওঠে- এবার
নামাও পাল
গান ধরো,
মাঝি; জলের
শব্দ ঝুপঝুপ
দেবে তাল।
ছোকানুর চোখ
ঘুমে ঢুলে
আসে- আমি
ঠিক জেগে
আছি,
গান গাওয়া
হ'লে
আমায় অনেক
গল্প বলবে,
মাঝি?
শুনতে-শুনতে
আমিও ঘুমাই
বিছানা বালিশ
বিনা-
মাঝি, তুমি
দেখো ছোকানুরে,
ভাই, ও
বড়োই ভীতু
কিনা
আমার জন্য
কিচ্ছু ভেবো
না, আমিই
তো বড়োই
প্রায়,
ঝড় এলে
ডেকো আমারে-
ছোকানু যেন
সুখে ঘুম
যায়।
রাজিয়া খাতুন চৌধুরাণী
চাষী
সব সাধকের
বড় সাধক
আমার দেশের
চাষা,
দেশ মাতারই
মুক্তিকামী, দেশের সে যে আশা।
দধীচি কি
তাহার চেয়ে
সাধক ছিল
বড়?
পুণ্য অত
হবে নাক
সব করিলে
জড়।
মুক্তিকামী মহাসাধক
মুক্ত করে
দেশ,
সবারই সে
অন্ন জোগায়
নাইক গর্ব
লেশ।
ব্রত তাহার
পরের হিত,
সুখ নাহি
চায় নিজে,
রৌদ্র দাহে
শুকায় তনু,
মেঘের জলে
ভিজে।
আমার দেশের
মাটির ছেলে,
নমি বারংবার
তোমায় দেখে
চূর্ণ হউক
সবার অহংকার।
হোসনে আরা
সফদার ডাক্তার
সফদার ডাক্তার
মাথাভরা টাক
তার
খিদে পেলে
পানি খায়
চিবিয়ে,
চেয়ারেতে রাতদিন
বসে গোণে
দুই-তিন
পড়ে বই
আলোটারে নিভিয়ে।
ইয়া বড়
গোঁফ তার,
নাই যার
জুড়িদার
শুলে তার
ভুঁড়ি ঠেকে
আকাশে,
নুন দিয়ে
খায় পান,
সারাক্ষণ গায়
গান
বুদ্ধিতে অতি
বড় পাকা
সে।
রোগী এলে
ঘরে তার,
খুশিতে সে
চারবার
কষে দেয়
ডন আর
কুস্তি,
তারপর রোগীটারে
গোটা দুই
চাঁটি মারে
যেন তার
সাথে কত
দুস্তি।
ম্যালেরিয় হলে
কারো নাহি
আর নিস্তার
ধরে তারে
কেঁচো দেয়
গিলিয়ে,
আমাশয় হলে
পরে দুই
হাতে কান
ধরে
পেটটারে ঠিক
করে কিলিয়ে।
কলেরার রোগী
এলে, দুপুরের
রোদে ফেলে
দেয় তারে
কুইনিন খাইয়ে,
তারপর দুই
টিন পচা
জলে তারপিন
ঢেলে তারে
দেয় শুধু
নাইয়ে।
ডাক্তার সফদার,
নাম ডাক
খুব তার
নামে গাঁও
থরথরি কম্প,
নাম শুনে
রোগী সব
করে জোর
কলরব
পিঠটান দিয়ে
দেয় লম্ফ।
একদিন সককালে
ঘটল কি
জঞ্জাল
ডাক্তার ধরে
এসে পুলিশে,
হাত-কড়া
দিয়ে হাতে
নিয়ে যায়
থানাতে
তারিখটা আষাঢ়ের
উনিশে।
হাবীবুর রহমান
সকাল
কাঁচা কাঁচা
রোদ মাখা
সকাল বেলা,
আকাশে ভাসাল
আজ আলোর
ভেলা।
গাছে গাছে
চিকচিক
আলো হাসে
ফিকফিক
চালে চালে
ঝিকঝিক এ
কোন্ খেলা,
কাঁচা সোনা
রোদ মাখা
সকাল বেলা।
শাখে শাখে
সে আলোর
পরশ লাগে,
দিকে দিকে
যেন কোন্
জীবন জাগে।
ফুলে ফুলে
উতরোল
জাগরণ কলরোল
বাতাসেতে হিল্লোল
প্রভাতী ফাগে,
দিকে দিকে
জীবনের পরশ
লাগে।
এসো আজ
মুঠি মুঠি
মাখি সে
আলো,
ধুয়ে যাক
মুছে যাক
মনের কালো।
এ আলোর
কুমকুম
দিয়ে যাক
রাঙাচুম
মন জুড়ে
রেখে যাক
অনেক ভালো,
এসো ভাই
মুঠি মুঠি
মাখি এ
আলো।
ফজলুর রহমান
গ্রীষ্মের দুপুরে
ঘাম ঝরে
দরদর
গ্রীষ্মের দুপুরে
খাল বিল
চৌচির,
জল নেই
পুকুরে।
মাঠে ঘাটে
লোক নেই,
খাঁ খাঁ
করে রোদ্দুর।
পিপাসায়
পথিকের
ছাতি কাঁপে
দুদ্দুর।
রোদ যেন
নয়, শুধু
গনগনে ফুলকি।
আগুনের
ঘোড়া যেন
ছুটে চলে
দুলকি।
ঝাঁঝ মাখা
হাওয়া এসে
ডালে দেয়
ঝাপটা!
পাতা নড়ে
ফুল পড়ে
বাপরে কি
দাপটা!
বিল ধারে
চিল বসে'
ঘন ঘন
ডাকে রে।
মাঝি বসে
ঢুল খায়
খেয়াঘাট বাঁকে
রে।
ছুটির দিনে
চাপা বনে ফুল ফুটেছে আয়রে তোরা আয়
ছুটির দিনে ঘরে কি আর বসে থাকা যায়।
শহর ছেড়ে মন চলে যায় অনেক দূরের গায়
নদীর জলে সেথায় মাঝি পাল তুলে ওই যায়।
চৈতী ফুলের মালা গাঁথে পল্লী বালিকা
ঝিরি ঝিরি বাতাসে ওই দোলে বীথিকা।
কলমি লতার ফাকে ডাহুক ভাটিয়ালী গায়
আজকে আমার মন যেতে চায় সেই দূর সীমানায়।
যেখানে রাখাল বসে বাঁশরী বাজায়
পথিক বসে জুড়ায় ঘাম বটের ছায়ায়।
আজকে তোরা আয়রে সবাই আয়রে ছুটে আয়
ছুটির দিনটা কাটিয়ে আসি শ্যামলা মায়ের গায়।
তবুও জীবন
পৃথিবীর পথে প্রান্তরে ঘুরেছি আমি,
দেখেছি ফুল ও পাথর সাজিয়ে
রেখেছেন অন্তর্যামী।
ভালবাসা দেখেছি, মমতা দেখেছি
বন্ধু দেখেছি, শত্রুও দেখেছি,
আরও দেখেছি অবজ্ঞা অবহেলা,
প্রেমের সাথে বঞ্চনার খেলা।
অবজ্ঞা উচ্ছ্বাস পাশাপাশি চলে
নদীকে যেমন বেধে রাখে দুকূল।
হৃদয়ের হাটে চলে বেচাকেনা
ভালো মন্দ যায় না চেনা।
তবুও মূল্য বেশি, অনেক বেদনা অনেক
যাতনা
তারপরেও থেকে যায় অনেক অজানা।
ভিড়ের মাঝে চিনতে হয় ভুল
কোথায় পাথর আর কোথায় ফুল।
কালের স্রোতে ভেসে যাওয়া মন
খুঁজে ফিরে ঠিকানা এইতো জীবন।
পথিকের গান
আমিও পথিক, গাই পথিকের গান
দেশ বিদেশে ঘুরেছি কত ইরান তুরান।
কত রঙ, আরও কত আছে তামাশা
আছে সবই শুধু নেই ভালবাসা।
পাঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট ইলোরা
প্যারিস রোম হয়ে এসেছি আগ্রা।
তেহরান কাবুল দুবাই সোমালিয়া
টেক্সাস টরেন্টো ফিলাডেলফিয়া।
পথে পথে ঘুরেছি, কত সাগর তীরে
হেঁটেছি সকাল সাঁঝে, জনতার ভিড়ে।
খুঁজেছি হৃদয়ের ঠিকানা, লোকালয়ের কাছে
পাইনি কিছু, হতাশ আমি কুহেলিকার মাঝে।
বেলা বয়ে যায় হাসি কান্নায়
শীত বসন্ত মিছে গান গায়।
কে আছ কোথায় বল শুনি বিধান
পশুতে মানুষে কী আছে ব্যবধান?
চীন জাপান হাওয়াই হংকং মালয়েশিয়া
ব্যাংকক ফিলিপাইন সিঙ্গাপুর ইন্দোনেশিয়া।
ওড়ে ওই আকাশে বাতাসে রঙ্গিন ফানুস
সাজান আছে সব দেখি নাই মানুষ।
এ কোন পৃথিবী দেখেছি এত দিন,
মনের জানালায় ওড়ে কি ধূলি রঙ্গিন?
তাড়া
আম বাগানের ধারে
পদ্মা নদীর পাড়ে
দাঁড়িয়ে ছিলাম সন্ধ্যা বেলা
সঙ্গী বিহীন আমি একেলা।
একটু পরে পুব আকাশে উঠে এলো চাঁদ
দূরে দেখি একটা শেয়াল লাফিয়ে এলো খাদ।
শেয়াল দেখে ভয় পেয়ে
দৌড়ে গেলাম আম বাগানে।
বুক করে ধড়ফড় আর পাতা সরসর
আর পারিনা চলতে আমি পা করে নড়বর।
শেয়াল মশাই ডাকে হুক্কা হুয়া
বাগানের দারোয়ান কালু বলে কিয়া হুয়া?
ঝোপের ভিতর কে রে ওধার
করিস কি আম পাচার?
কালু মিয়ার হাঁক শুনে
বেড়ে গেল ধড়ফড়ানি তিন গুনে।
সাহস করে চেঁচিয়ে দিলাম সারা
ও ভাই কালু শেয়ালে করেছে তাড়া,
তুই বাচা মোরে বাচা
প্রাণটা বুঝি গেল ছেড়ে খাঁচা।
মেঝ মনি
লক্ষ্মী আমার পাগলি মা থাকিস হৃদয় জুড়ে
কোথায় গেলি সোনামণি আয়না কাছে ওরে।।
আড়াআড়ি করে শুধু কাটাস সারা বেলা
যখন ডাকি তখনই তুই করিস শুধু খেলা,
অফিস থেকে এসে আমি পাইনা খুঁজে তোরে।।
ঘুমের ঘোড়ে দেখিস শুধু ফুল কুড়ানোর স্বপ্ন
মন নেই তোর পড়াতে ভাবিস মায়ের জন্য,
ইশকুলেতে ব্যস্ত থাকিস ফিরবি কখন ঘরে।।
ঘুম পরী
দিনের শেষে খুকুর চোখে আয়রে ঘুম আয়
ঘুম পরী তোর পায়ে পড়ি খুকুর চোখে আয়।।
খুকু আমার সোনার পুতুল বায়না ধরেছে
চাঁদের দেশে যাবে বলে রকেট কিনেছে,
সেই রকেটের পাখায় চড়ে আয়রে ঘুম আয়।।
চাঁদের দেশে ফুল বাগানে থাকবে খুকু একা
সন্ধ্যা হলেই জোনাক মালা জ্বলবে থোকা থোকা,
সেই আলোরই সোপান বেয়ে খুকুর চোখে আয়।।
জাতীয় সংগীত
আমার সোনার বাংলা,
আমি তোমায় ভালবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ,
তোমার বাতাস
আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।
ও মা,
ফাগুনে তোর আমের বনে
ঘ্রাণে পাগল করে
মরি হায়, হায় রে
ও মা,
অঘ্রানে তোর ভরা খেতে,
আমি কী দেখেছি মধুর হাসি।।
কী শোভা, কী ছায়া গো,
কী স্নেহ, কী মায়া গো,
কী আঁচল বিছায়েছ
বটের মূলে,
নদীর কূলে কূলে।
মা, তোর মুখের বাণী
আমার কানে লাগে
সুধার মতো-
মা তোর বদন খানি মলিন হলে
আমি নয়ন
ও মা আমি নয়ন জলে ভাসি
সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি
মানুষ – কাজী নজরুল ইসলাম
গাহি
সাম্যের গান-
মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান,
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে, সল কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।
মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান,
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে, সল কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।
‘পূজারী,
দুয়ার খোল,
ক্ষুদার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পূজার সময় হলো!’
স্বপ্ন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয়
দেবতার বরে আজ রাজা-টাজা হ’য়ে যাবে নিশ্চয়!
জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুদায় কন্ঠ ক্ষীণ
ডাকিল পান্থ, ‘দ্বার খোল বাবা, খাইনি তো সাত দিন!’
সহসা বন্ধ হ’ল মন্দির, ভুখারী ফিরিয়া চলে,
তিমির রাত্রি, পথ জুড়ে তার ক্ষুদার মানিক জ্বলে!
ক্ষুদার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পূজার সময় হলো!’
স্বপ্ন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয়
দেবতার বরে আজ রাজা-টাজা হ’য়ে যাবে নিশ্চয়!
জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুদায় কন্ঠ ক্ষীণ
ডাকিল পান্থ, ‘দ্বার খোল বাবা, খাইনি তো সাত দিন!’
সহসা বন্ধ হ’ল মন্দির, ভুখারী ফিরিয়া চলে,
তিমির রাত্রি, পথ জুড়ে তার ক্ষুদার মানিক জ্বলে!
ভুখারী
ফুকারি’ কয়,
‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়!’
‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়!’
মসজিদে
কাল শিরনী
আছিল, অঢেল
গোস্ত রুটি
বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটিকুটি!
এমন সময় এলো মুসাফির গায়ে-আজারির চিন্
বলে ‘বাবা, আমি ভুকা ফাকা আছি আজ নিয়ে সাত দিন!’
তেরিয়াঁ হইয়া হাঁকিল মোল্লা – “ভ্যালা হ’ল দেখি লেঠা,
ভুখা আছ মর গো-ভাগাড়ে গিয়ে! নামাজ পড়িস বেটা?”
ভুখারী কহিল, ‘না বাবা!’ মোল্লা হাঁকিল – তা’ হলে শালা
সোজা পথ দেখ!’ গোস্ত-রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা!
বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটিকুটি!
এমন সময় এলো মুসাফির গায়ে-আজারির চিন্
বলে ‘বাবা, আমি ভুকা ফাকা আছি আজ নিয়ে সাত দিন!’
তেরিয়াঁ হইয়া হাঁকিল মোল্লা – “ভ্যালা হ’ল দেখি লেঠা,
ভুখা আছ মর গো-ভাগাড়ে গিয়ে! নামাজ পড়িস বেটা?”
ভুখারী কহিল, ‘না বাবা!’ মোল্লা হাঁকিল – তা’ হলে শালা
সোজা পথ দেখ!’ গোস্ত-রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা!
ভুখারী
ফিরিয়া চলে,
চলিতে চলিতে বলে-
চলিতে চলিতে বলে-
“আশিটা বছর
কেটে গেল,
আমি ডাকিনি
তোমায় কভু,
আমার ক্ষুদার অন্ন তা’বলে বন্ধ করোনি প্রভু
তব মসজিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী,
আমার ক্ষুদার অন্ন তা’বলে বন্ধ করোনি প্রভু
তব মসজিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী,
মোল্লা-পুরুত
লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবী!”
নারী
সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-
রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!
বিশ্বের যা কিছু মহান
সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী,
অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা কিছু এল পাপ তাপ
বেদনা অশ্রুবারি,
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর
অর্ধেক তার নারী।
নরক কুন্ড বলিয়া তোমা’
করে নারী হেয় জ্ঞান?
তারে বল, আদি-পাপ নারী নহে,
সে যে নর শয়তান।
অথবা পাপ যে-শয়তান যে-নর
নহে নারী নহে,
ক্লীব সে, তাই নর ও
নারীতে সমান মিশিয়া রহে।
এ বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল,
ফলিয়াছে যত ফল
নারী দিল তাহে রূপ-রস-সূধা-
গন্ধ সুনির্মল। তাজমহলের পাথর
দেখেছ, দেখিয়াছ তার প্রাণ?
অন্তরে তার মমতাজ নারী,
বাহিরেতে শা-জাহান।
জ্ঞানের লক্ষী, গানের লক্ষী,
শষ্য-লক্ষী নারী,
সুষম-লক্ষী নারীওই
ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারী’।
পুরুষ এনেছে দিবসের
জ্বালা তপ্ত রৌদ্রদাহ
কামিনী এনেছে যামিনী শান্তি সমীরণ
বারিবাহ।
দিবসে দিয়াছে শক্তি সাহস,
নিশিথে হয়েছে বঁধু
পুরুষ
এসেছে মরুতৃষা লয়ে নারী যোগায়েছে মধু।
শষ্য ক্ষেত্র উর্বর হল,পুরুষ
চালাল হাল,
নারী সেই মাঠে শষ্য
রোপিয়া করিল সুশ্যামল।
নর বাহে হল, নারী বহে জল,সেই জল
মাটি মিশে’
ফসল হইয়া ফলিয়া উঠিল
সোনালী ধানের শীষে
স্বর্ণ-রৌপ্যভার,
নারীর অঙ্গ-পরশ
লভিয়া হয়েছে অলঙ্কার।
নারীর বিরহে, নারীর মিলনে নর
পেল কবি-প্রাণ
যত কথা হইল কবিতা, শব্দ হইল গান।
নর দিল ক্ষুধা, নারী দিল
সুঢা,সুঢায় ক্ষুধায় মিলে’
জন্ম লভিছে মহামানবের
মহাশিশু তিলে তিলে।
জগতের যত বড় বড় জয়, বড় বড়
অভিযান
মাতা ভগ্নি বধুদের
ত্যাগে হইয়াছে মহান।
কোন রণে কত খুন দিল নর,
লেখা আছে ইতিহাসে
কত নারী দিল সিঁথির সিদুর,
লেখা নাই তার পাশে।
কত মাতা দিল হৃদয় উপড়ি, কত
বোন দিল সেবা
বীর স্মৃতি স্তম্ভের
গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা?
কোন কালে একা হয়নি ক
জয়ী পুরুষের তরবারী
প্রেরণা দিয়েছে,
শক্তি দিয়েছে বিজয়
লক্ষী নারী।
সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-
রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!
বিশ্বের যা কিছু মহান
সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী,
অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা কিছু এল পাপ তাপ
বেদনা অশ্রুবারি,
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর
অর্ধেক তার নারী।
নরক কুন্ড বলিয়া তোমা’
করে নারী হেয় জ্ঞান?
তারে বল, আদি-পাপ নারী নহে,
সে যে নর শয়তান।
অথবা পাপ যে-শয়তান যে-নর
নহে নারী নহে,
ক্লীব সে, তাই নর ও
নারীতে সমান মিশিয়া রহে।
এ বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল,
ফলিয়াছে যত ফল
নারী দিল তাহে রূপ-রস-সূধা-
গন্ধ সুনির্মল। তাজমহলের পাথর
দেখেছ, দেখিয়াছ তার প্রাণ?
অন্তরে তার মমতাজ নারী,
বাহিরেতে শা-জাহান।
জ্ঞানের লক্ষী, গানের লক্ষী,
শষ্য-লক্ষী নারী,
সুষম-লক্ষী নারীওই
ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারী’।
পুরুষ এনেছে দিবসের
জ্বালা তপ্ত রৌদ্রদাহ
কামিনী এনেছে যামিনী শান্তি সমীরণ
বারিবাহ।
দিবসে দিয়াছে শক্তি সাহস,
নিশিথে হয়েছে বঁধু
পুরুষ
এসেছে মরুতৃষা লয়ে নারী যোগায়েছে মধু।
শষ্য ক্ষেত্র উর্বর হল,পুরুষ
চালাল হাল,
নারী সেই মাঠে শষ্য
রোপিয়া করিল সুশ্যামল।
নর বাহে হল, নারী বহে জল,সেই জল
মাটি মিশে’
ফসল হইয়া ফলিয়া উঠিল
সোনালী ধানের শীষে
স্বর্ণ-রৌপ্যভার,
নারীর অঙ্গ-পরশ
লভিয়া হয়েছে অলঙ্কার।
নারীর বিরহে, নারীর মিলনে নর
পেল কবি-প্রাণ
যত কথা হইল কবিতা, শব্দ হইল গান।
নর দিল ক্ষুধা, নারী দিল
সুঢা,সুঢায় ক্ষুধায় মিলে’
জন্ম লভিছে মহামানবের
মহাশিশু তিলে তিলে।
জগতের যত বড় বড় জয়, বড় বড়
অভিযান
মাতা ভগ্নি বধুদের
ত্যাগে হইয়াছে মহান।
কোন রণে কত খুন দিল নর,
লেখা আছে ইতিহাসে
কত নারী দিল সিঁথির সিদুর,
লেখা নাই তার পাশে।
কত মাতা দিল হৃদয় উপড়ি, কত
বোন দিল সেবা
বীর স্মৃতি স্তম্ভের
গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা?
কোন কালে একা হয়নি ক
জয়ী পুরুষের তরবারী
প্রেরণা দিয়েছে,
শক্তি দিয়েছে বিজয়
লক্ষী নারী।
প্রভাতী
ভোর
হলো দোর
খোলো
খুকুমণি ওঠ রে!
ঐ ডাকে যুঁই-শাখে
ফুল-খুকি ছোটরে!
রবি মামা দেয় হামা
গায়ে রাঙা জামা ঐ,
দারোয়ান গায় গান
শোন ঐ, রামা হৈ!’
ত্যাজি নীড় করে ভিড়
ওড়ে পাখি আকাশে
এন্তার গান তার
ভাসে ভোর বাতাসে।
চুলবুল বুলবুল
শিস্ দেয় পুষ্পে,
এইবার এইবার
খুকুমণি উঠবে!
খুলি হাল তুলি পাল
ঐ তরী চললো,
এইবার এইবার
খুকু চোখ খুললো।
আলসে নয় সে
ওঠে রোজ সকালে
রোজ তাই চাঁদা ভাই
টিপ দেয় কপালে।
উঠলো ছুটলো ওই
খোকা খুকি সব,
”উঠেছে আগে কে”
ঐ শোনো কলরব।
নাই রাত মুখ হাত
ধোও, খুকু জাগো রে!
জয়গানে খোদার কাছে
তুষি’ বর মাগো রে।
খুকুমণি ওঠ রে!
ঐ ডাকে যুঁই-শাখে
ফুল-খুকি ছোটরে!
রবি মামা দেয় হামা
গায়ে রাঙা জামা ঐ,
দারোয়ান গায় গান
শোন ঐ, রামা হৈ!’
ত্যাজি নীড় করে ভিড়
ওড়ে পাখি আকাশে
এন্তার গান তার
ভাসে ভোর বাতাসে।
চুলবুল বুলবুল
শিস্ দেয় পুষ্পে,
এইবার এইবার
খুকুমণি উঠবে!
খুলি হাল তুলি পাল
ঐ তরী চললো,
এইবার এইবার
খুকু চোখ খুললো।
আলসে নয় সে
ওঠে রোজ সকালে
রোজ তাই চাঁদা ভাই
টিপ দেয় কপালে।
উঠলো ছুটলো ওই
খোকা খুকি সব,
”উঠেছে আগে কে”
ঐ শোনো কলরব।
নাই রাত মুখ হাত
ধোও, খুকু জাগো রে!
জয়গানে খোদার কাছে
তুষি’ বর মাগো রে।
কাজী নজরুল
ইসলাম
সংকল্প
থাকব না'ক বদ্ধ
ঘরে
দেখব এবার
জগৎটাকে
কেমন করে
ঘুরছে মানুষ
যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে।
দেশ হতে
দেশ দেশান্তরে
ছুটছে তারা
কেমন করে,
কিসের নেশায়
কেমন করে
মরছে যে
বীর লাখে
লাখে।
কিসের আশায়
করছে তারা
বরণ মরণ
যন্ত্রণাকে
কেমন করে
বীর ডুবুরি
সিন্ধু সেঁচে
মুক্তা আনে,
কেমন করে
দুঃসাহসী
চলছে উড়ে
স্বর্গপানে।
হাউই চড়ে
চায় যেতে
কে
চন্দ্রলোকের অচিনপুরে,
শুনব আমি,
ইঙ্গিতে কোন
মঙ্গল হতে
আসছে উড়ে।
পাতাল ফেড়ে
নামব আমি
উঠব আমি
আকাশ ফুঁড়ে,
বিশ্বজগৎ দেখব
আমি
আপন হাতের
মুঠোয় পুরে।
কাজী নজরুল ইসলাম
খোকার সাধ
আমি হব
সকাল বেলার
পাখি
সবার আগে
কুসুম-বাগে
উঠব আমি
ডাকি।
সূয্যিমামা জাগার
আগে উঠব
আমি জেগে,
'হয়নি সকাল,
ঘুমো এখন'-
মা বলবেন
রেগে।
বলব আমি,
'আলসে মেয়ে
ঘুমিয়ে তুমি
থাক,
হয়নি সকাল-
তাই বলে
কি সকাল
হবে নাকো!
আমরা যদি
না জাগি
মা কেমনে
সকাল হবে?
তোমার ছেলে
উঠলে গো
মা রাত
পোহাবে তবে!'
ঊষা দিদির
ওঠার আগে
উঠব পাহাড়-চূড়ে,
দেখব নিচে
ঘুমায় শহর
শীতের কাঁথা
মুড়ে,
ঘুমায় সাগর
বালুচরে নদীর
মোহনায়,
বলব আমি
'ভোর হল
যে, সাগর
ছুটে আয়!
ঝর্ণা মাসি
বলবে হাসি',
'খোকন এলি
নাকি?'
বলব আমি
নই কো
খোকন, ঘুম-জাগানো পাখি!'
ফুলের বনে
ফুল ফোটাব,
অন্ধকারে আলো,
সূয্যিমামা বলবে
উঠে, 'খোকন,
ছিলে ভাল?'
বলব 'মামা,
কথা কওয়ার
নাই ক
সময় আর,
তোমার আলোর
রথ চালিয়ে
ভাঙ ঘুমের
দ্বার।'
রবির আগে
চলব আমি
ঘুম-ভাঙা
গান গেয়ে,
জাগবে সাগর,
পাহাড় নদী,
ঘুমের ছেলেমেয়ে!
লিচু-চোর
বাবুদের তাল-পুকুরে
হাবুদের ডাল-কুকুরে
সে কি
বাস্ করলে
তাড়া,
বলি থাম্
একটু দাঁড়া।
পুকুরের ঐ
কাছে না
লিচুর এক
গাছ আছে
না
হোথা না
আস্তে গিয়ে
য়্যাব্বড় কাস্তে
নিয়ে
গাছে গ্যে
যেই চড়েছি
ছোট এক
ডাল ধরেছি,
ও বাবা,
মড়াৎ করে
পড়েছি সড়াৎ
জোরে!
পড়বি পড়
মালীর ঘাড়েই,
সে ছিল
গাছের আড়েই।
ব্যাটা ভাই
বড় নচ্ছার,
ধুমাধুম গোটা
দুচ্চার
দিল খুব
কিল ও
ঘুসি
একদম জোরসে
ঠুসি!
আমিও বাগিয়ে
থাপড়
দে হাওয়া
চাগিয়ে কাপড়
লাফিয়ে ডিঙনু
দেয়াল,
দেখি এক
ভিটরে শেয়াল!
আরে ধ্যাৎ
শেয়াল কোথা?
ভোলাটা দাঁড়িয়ে
হোথা!
দেখে যেই
আঁতকে ওঠা
কুকুরও জাড়লে
ছোটা!
আমি কই
কম্ম কাবার
কুকুরেই করবে
সাবাড়!
'বাবা গো
মা গো'
বলে
পাঁচিলের ফোঁকল
গলে
ঢুকি গ্যে
বোসদের ঘরে,
যেন প্রাণ
আসলো ধড়ে!
যাব ফের?
কান মলি
ভাই,
চুরিতে আর
যদি যাই!
তবে মোর
নামই মিছা!
কুকুরের চামড়া
খিঁচা
সে কি
ভাই যায়
রে ভুলা-
মালীর ঐ
পিটনিগুলা!
কি বলিস্?
ফের হপ্তা!
তৌবা-নাক
খপতা।
খুকি ও কাঠবেড়ালি
কাঠবেড়ালি! কাঠবেড়ালি!
পেয়ারা তুমি
খাও?
গুড়-মুড়ি
খাও? দুধ-ভাত খাও?
বাতাবি-নেবু?
লাউ?
বেড়াল-বাচ্চা?
কুকুর-ছানা?
তাও-
ডাইনি তুমি
হোঁৎকা পেটুক,
খাও একা
পাও যেথায়
যেটুক!
বাতাবি-নেবু
সকলগুলো
একলা খেলে
ডুবিয়ে নুলো!
তবে যে
ভারি ল্যাজ
উঁচিয়ে পুটুস
পাটুস চাও?
ছোঁচা তুমি!
তোমার সঙ্গে
আড়ি আমার!
যাও!
কাঠবেড়ালি! বাঁদরীমুখী!
মারবো ছুঁড়ে
কিল?
দেখবি তবে?
রাঙাদাকে ডাকবো?
দেবে ঢিল!
পেয়ারা দেবে?
যা তুই
ওঁচা!
তাই তোর
নাকটি বোঁচা!
হুতমো-চোখী!
গাপুস গুপুস
একলাই খাও
হাপুস হুপুস!
পেটে তোমার
পিলে হবে!
কুড়ি-কুষ্টি
মুখে!
হেই ভগবান!
একটা পোকা
যাস পেটে
ওর ঢুকে!
ইস! খেয়ো
না মস্তপানা
ঐ সে
পাকাটাও!
আমিও খুবই
পেয়ারা খাই
যে! একটি
আমায় দাও!
কাঠবেড়ালি! তুমি
আমার ছোড়দি'
হবে? বৌদি
হবে?
হুঁ!
রাঙা দিদি?
তবে একটা
পেয়ারা দাও
না! উঃ!
এ রাম!
তুমি ন্যাংটা
পুঁটো?
ফ্রকটা নেবে?
জামা দুটো?
আর খেয়ো
না পেয়ার
তবে,
বাতাবি-নেবুও
ছাড়তে হবে!
দাঁত দেখিয়ে
দিচ্ছ ছুট?
অ'মা
দেখে যাও!-
কাঠবেড়ালি! তুমি
মর! তুমি
কচু খাও!!
শিশু যাদুকর
পার হয়ে
কত নদী
কত সে
সাগর
এই পারে
এলি তুই
শিশু যাদুকর!
কোন রূপ-লোকে ছিলি
রূপকথা তুই,
রূপ ধরে
এলি এই
মমতার ভুঁই।
নবনীতে সুকোমল
লাবণি লয়ে
এলি কে
রে অবনীতে
দিগ্বিজয়ে।
কত সে
তিমির-নদী
পারায়ে এলি-
নির্মল নভে
তুই চাঁদ
পহেলি।
আমরার প্রজাপতি
অন্যমনে
উড়ে এলি
দূর কান্তার-কাননে।
পাখা ভরা
মাখা তোর
ফুল-ধরা
ফাঁদ,
ঠোঁটে আলো
চোখে কালো-কলঙ্কী চাঁদ!
কালো দিয়ে
করি তোর
আলো উজ্জ্বল-
কপালেতে টিপ
দিয়ে নয়নে
কাজল।
তারা-যুঁই
এই ভুঁই
আসিলি যবে,
একটি তারা
কি কম
পড়িল নভে?
বনে কি
পড়িল কম
একটি কুসুম?
ধরণীর কোলে
এলি একরাশ
চুম।
স্বরগের সব-কিছু চুরি
করে, চোর,
পলাইয়া এলি
এই পৃথিবীর
ক্রোড়!
তোর নামে
রহিল রে
মোর স্মৃতিটুক,
তোর মাঝে
রহিলাম আমি
জাগরুক।
ভাঙ্গার গান
কারার
ওই লৌহ-কপাট,
ভেঙে ফেল্ কররে লোপাট
রক্ত-জমাট, শিকল-পূজার পাষাণ-বেদী৷
ওরে ও তরুণ ঈশান,
বাজা তোর প্রলয়-বিষাণ!
ধ্বংস-নিশান, উড়ুক প্রাচীর, প্রাচীর ভেদি৷
ভেঙে ফেল্ কররে লোপাট
রক্ত-জমাট, শিকল-পূজার পাষাণ-বেদী৷
ওরে ও তরুণ ঈশান,
বাজা তোর প্রলয়-বিষাণ!
ধ্বংস-নিশান, উড়ুক প্রাচীর, প্রাচীর ভেদি৷
গাজনের
বাজ্ না
বাজা,
কে মালিক? কে সে রাজা?
কে দেয় সাজা, মুক্ত-স্বাধীন সত্য কে রে!
হা হা হা পায় যে হাসি,
ভগবান পর্ বে ফাঁসি?
সর্ব্বনাসী, শিখায় এ হীন্ তথ্য কে রে?
কে মালিক? কে সে রাজা?
কে দেয় সাজা, মুক্ত-স্বাধীন সত্য কে রে!
হা হা হা পায় যে হাসি,
ভগবান পর্ বে ফাঁসি?
সর্ব্বনাসী, শিখায় এ হীন্ তথ্য কে রে?
ওরে
ও পাগলা
ভোলা,
দে রে দে প্রলয়-দোলা
গারদগুলা, জোর সে ধ’রে হেচকা টানে!
মার হাঁক হৈদরী হাঁক,
কাঁধে নে দুন্দুভি ঢাক
ডাক ওরে ডাক, মৃত্যুকে ডাক্ জীবন পানে৷
দে রে দে প্রলয়-দোলা
গারদগুলা, জোর সে ধ’রে হেচকা টানে!
মার হাঁক হৈদরী হাঁক,
কাঁধে নে দুন্দুভি ঢাক
ডাক ওরে ডাক, মৃত্যুকে ডাক্ জীবন পানে৷
নাচে
ঐ কাল-বোশেখী,
কাটাবি কাল ব’সে কি?
দেয় রে দেখি, ভীম-কারার ঐ ভিত্তি নাড়ি!
লাথি মার্ ভাঙ্ রে তালা!
যত সব বন্দী-শালায়
আগুন জ্বালা, আগুন জ্বালা, ফেল্ উপাড়ি৷
কাটাবি কাল ব’সে কি?
দেয় রে দেখি, ভীম-কারার ঐ ভিত্তি নাড়ি!
লাথি মার্ ভাঙ্ রে তালা!
যত সব বন্দী-শালায়
আগুন জ্বালা, আগুন জ্বালা, ফেল্ উপাড়ি৷
কায়কোবাদ
আযান
কে ওই
শোনাল মোরে
আযানের ধ্বনি।
মর্মে মর্মে
সেই সুর,
বাজিল কি
সুমধুর
আকুল হইল
প্রাণ, নাচিল
ধমনী।
কি মধুর
আযানের ধ্বনি!
আমি তো
পাগল হয়ে
সে মধুর
তানে,
কি যে
এক আকর্ষণে,
ছুটে যাই
মুগ্ধমনে
কি নিশীথে,
কি দিবসে
মসজিদের পানে।
হৃদয়ের তারে
তারে, প্রাণের
শোণিত-ধারে,
কি যে
এক ঢেউ
উঠে ভক্তির
তুফানে-
কত সুধা
আছে সেই
মধুর আযানে।
নদী ও
পাখির গানে
তারই প্রতিধ্বনি।
ভ্রমরের গুণ-গানে সেই
সুর আসে
কানে
কি এক
আবেশে মুগ্ধ
নিখিল ধরণী।
ভূধরে, সাগরে
জলে নির্ঝরণী
কলকলে,
আমি যেন
শুনি সেই
আযানের ধ্বনি।
আহা যবে
সেই সুর
সুমধু স্বরে,
ভাসে দূরে
সায়াহ্নের নিথর অম্বরে,
প্রাণ করে
আনচান, কি
মধুর সে
আযান,
তারি প্রতিধ্বনি
শুনি আত্মার
ভিতরে।
নীরব নিঝুম
ধরা, বিশ্বে
যেন সবই
মরা,
এতটুকু শব্দ
যবে নাহি
কোন স্থানে,
মুয়াযযিন উচ্চৈঃস্বরে
দাঁড়ায়ে মিনার
'পরে
কি সুধা
ছড়িয়ে দেয়
উষার আযানে!
জাগাইতে মোহমুদ্ধ
মানব সন্তানে।
আহা কি
মধুর ওই
আযানের ধ্বনি।
মর্মে মর্মে
সেই সুর
বাজিল কি
সমধুর
আকুল হইল
প্রাণ, নাচিল
ধমনী।...
রামনিধি গুপ্ত
স্বদেশী ভাষা
নানান দেশের
নানান ভাষা।
বিনে স্বদেশীয়
ভাষা,
পুরে কি
আশা?
কত নদী
সরোবর কিবা
ফল চাতকীর
ধারাজল বিনে
কভু
ঘুচে কি
তৃষা?
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
কে?
বল দেখি এ জগতে ধার্মিক
কে হয়,
সর্ব জীবে দয়া যার, ধার্মিক
সে হয়।
বল দেখি এ জগতে সুখী বলি
কারে,
সতত আরোগী যেই, সুখী বলি
তারে।
বল দেখি এ জগতে বিজ্ঞ
বলি কারে,
হিতাহিত বোধ যার, বিজ্ঞ
বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে ধীর বলি
কারে,
বিপদে যে স্থির থাকে,
ধীর বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে মূর্খ
বলি কারে,
নিজ কার্য নষ্ট করে, মূর্খ
বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে সাধু বলি
কারে,
পরের যে ভাল করে, সাধু
বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে জ্ঞানী
বলি কারে,
নিজ বোধ আছে যার জ্ঞানী
বলি তারে।
মদনমোহন তর্কালঙ্কার
আমার পণ
সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে
বলি,
সারাদিন আমি যেন ভাল হয়ে
চলি।
আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে,
আমি যেন সেই কাজ করি ভাল
মনে।
ভাইবোন সকলেরে যেন ভালবাসি,
এক সাথে থাকি যেন সবে
মিলেমিশি।
ভাল ছেলেদের সাথে মিশে
করি খেলা,
পাঠের সময় যেন নাহি করি
হেলা।
সুখী যেন নাহি হই আর কারো
দুখে,
মিছে কথা কভু যেন নাহি
আসে মুখে।
সাবধানে যেন লোভ সামলিয়ে
থাকি,
কিছুতে কাহারে যেন নাহি
দেই ফাঁকি।
ঝগড়া না করি যেন কভু কারো
সনে
সকালে উঠিয়া এই বলি মনে
মনে।
No comments:
Post a Comment