অপব্যয়ের ফল
যে জন দিবসে মনের হরষে
জ্বালায় মোমের বাতি,
আশু গৃহে তার দখিবে না
আর
নিশীথে প্রদীপ ভাতি।
সুত্রঃ এই ছড়া কবিতাগুলি এখান থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার
বুঝিবে সে কিসে
চিরসুখীজন ভ্রমে কি কখন
ব্যথিতবেদন বুঝিতে পারে।
কী যাতনা বিষে, বুঝিবে
সে কিসে
কভূ আশীবিষে দংশেনি যারে।
যতদিন ভবে, না হবে না
হবে,
তোমার অবস্থা আমার সম।
ঈষৎ হাসিবে, শুনে না শুনিবে
বুঝে না বুঝিবে, যাতনা
মম।
যোগীন্দ্রনাথ সরকার
কাজের ছেলে
'দাদ্খানি চাল, মুসুরির
ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
দু'টা পাকা বেল, সরিষার
তেল, ডিম-ভরা কৈ।'
পথে হেঁটে চলি, মনে মনে
বলি, পাছে হয় ভুল;
ভুল যদি হয়, মা তবে নিশ্চয়,
ছিঁড়ে দেবে চুল।
'দাদ্খানি চাল, মুসুরির
ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
দু'টা পাকা বেল, সরিষার
তেল, ডিম-ভরা কৈ।'
বাহবা বাহবা- ভোলা ভূতো
হাবা খেলিছে তো বেশ।
দেখিব খেলাতে, কে হারে
কে জেতে, কেনা হলে শেষ।
'দাদ্খানি চাল, মুসুরির
ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
ডিম ভরা বেল, দু'টা পাকা
তেল, সরিষার কৈ।'
ওই তো ওখানে ঘুড়ি ধরে
টানে, ঘোষেদের ননী:
আমি যদি পাই, তা হলে উড়াই
আকাশে এখনি।
দাদখানি তেল, ডিম-ভরা
বেল, দু'টা পাকা দৈ,
সরিষার চাল, চিনি-পাতা
ডাল, মুসুরির কৈ!
এসেছি দোকানে-কিনি এই
খানে, যদি কিছু পাই;
মা যাহা বলেছে, ঠিক মনে
আছে, তাতে ভুল নাই!
দাদখানি বেল, মুসুরির
তেল, সরিষার কৈ,
চিনি-পাতা চাল, দু'টা
পাকা ডাল, ডিম-ভরা দৈ।
যতীন্দ্র মোহন বাগচী
কাজলা দিদি
বাঁশ বাগানের মাথার উপর
চাঁদ উঠেছে ওই,
মাগো আমার শোলক-বলা কাজলা
দিদি কই?
পুকুর ধারে লেবুর তলে
থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না
একলা জেগে রই-
মাগো আমার কোলের কাছে
কাজলা দিদি কই?
সেদিন হতে কেন মা আর দিদিরে
না ডাকো;-
দিদির কথায় আঁচল দিয়ে
মুখটি কেন ঢাকো?
খাবার খেতে আসি যখন, দিদি
বলে ডাকি তখন,
ওঘর থেকে কেন মা আর দিদি
আসে নাকো?
আমি ডাকি তুমি কেন চুপটি
করে থাকো?
বল মা দিদি কোথায় গেছে,
আসবে আবার কবে?
কাল যে আমার নতুন ঘরে
পুতুল-বিয়ে হবে!
দিদির মত ফাঁকি দিয়ে,
আমিও যদি লুকাই গিয়ে
তুমি তখন একলা ঘরে কেমন
করে রবে,
আমিও নাই-দিদিও নাই- কেমন
মজা হবে।
ভুঁই চাপাতে ভরে গেছে
শিউলি গাছের তল,
মাড়াস্ নে মা পুকুর থেকে
আনবি যখন জল।
ডালিম গাছের ফাঁকে ফাঁকে
বুলবুলিটি লুকিয়ে থাকে,
উড়িয়ে তুমি দিও না মা,
ছিঁড়তে গিয়ে ফল,-
দিদি এসে শুনবে যখন, বলবি
কি মা বল!
বাঁশ বাগানের মাথার উপর
চাঁদ উঠেছে ওই-
এমন সময় মাগো আমার কাজলা
দিদি কই?
লেবুর ধারে পুকুর পাড়ে
ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোপেঝাড়ে'
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না,
তাইতে জেগে রই
রাত্রি হলো মাগো আমার
কাজলা দিদি কই?
সত্যন্দ্রনাথ দত্ত
ছিন্নমুকুল
সবচেয়ে যে ছোট্ট পিঁড়িখানি
সেইখানি আর কেউ রাখে না
পেতে
ছোট থালায় হয় নাকো ভাত
বাড়া
জল ভরে না ছোট্ট গেলাসেতে;
বাড়ির মধ্যে সবচেয়ে যে
ছোট
খাবার বেলায় কেউ ডাকে
না তাকে,
সবচেয়ে যে শেষে এসেছিল
তারি খাওয়া ঘুচেছে সব-আগে।
সবচেয়ে যে অল্পে ছিল খুশি
খুশি ছিল ঘেঁষাঘেঁষির
ঘরে,
সেই গেছে, হায়, হাওয়ার
সঙ্গে মিশে,
দিয়ে গেছে জায়গা খালি
করে।
ছেড়ে গেছে পুতুল, পুঁতির
মালা,
ছেড়ে গেছে মায়ের কোলের
দাবি;
ভয়-তরাসে ছিলো যে সবচেয়ে
সেই খুলেছে আঁধার ঘরের
চাবি।...
চলে গেছে একলা চুপে চুপে-
দিনের আলো গেছে আঁধার
ক'রে;
যাবার বেলা টের পেলো না
কেহ,
পারলে না কেউ রাখতে তারে
ধ'রে।
চলে গেলো, - পড়তে চোখের
পাতা,-
বিসর্জনের বাজনা শুনে
বুঝি!
হারিয়ে গোলো- অজানাদের
ভিড়ে,
হারিয়ে গেলো - পেলাম না
আর খুঁজি।
হারিয়ে গেছে- হারিয়ে গেছে,
ওরে!
হারিয়ে গেছে বোল-বলা সেই
বাঁশি
হারিয়ে গেছে কচি সে মুখখানি,
দুধে-ধোওয়া কচি দাঁতের
হাসি।
আঁচল খুলে হঠাৎ স্রোতের
জলে
ভেসে গেছে শিউলি ফুলের
রাশি,
ঢুকেছে হায় শ্মশানঘরের
মাঝে
ঘর ছেড়ে তাই হৃদয় শ্মশান-বাসী।
সব-চেয়ে যে ছোট কাপড়গুলি
সেগুলি কেউ দেয় না মেলে
ছাদে,
যে শয্যাটি সবার চেয়ে
ছোট
আজকে সেটি শূন্যে পড়ে
কাঁদে,
সব-চেয়ে যে শেষে এসেছিলো
সে গিয়েছে সবার আগে সরে
ছোট্ট যে জন ছিলো রে সব
চেয়ে
সে দিয়েছে সকল শূন্য করে।
শেখ ফজলুল করিম
তুলনা
সাত শত ক্রোশ করিয়া ভ্রমণ
জ্ঞানীর অন্বেষণে,
সহসা একদা পেল সে প্রবীণ
কোনো এক মহাজনে।
শুধাল, ''হে জ্ঞানী! আকাশের
চেয়ে উচ্চতা বেশি কার?''
জ্ঞানী বলে, ''বাছা, সত্যের
চেয়ে উঁচু নাহি কিছু আর।''
পুনঃ সে কহিল, ''পৃথিবীর
চেয়ে ওজনে ভারী কি আছে?''
জ্ঞানী বলে, ''বাছা, নিষ্পাপ
জনে দোষারোপ করা মিছে।''
জিজ্ঞাসে পুনঃ, ''পাথরের
চেয়ে কি আছে অধিক শক্ত?''
জ্ঞানী বলে, ''বাছা, সেই
যে হৃদয় জগদীশ-প্রেম-ভক্ত।''
কহিল আবার, ''অনলের চেয়ে
উত্তাপ বেশি কার?''
জ্ঞানী বলে, ''বাছা, ঈর্ষার
কাছে বহ্নিতাপও ছার।''
পুছিল পথিক, ''বরফের চেয়ে
শীতল কি কিছু নাই?''
জ্ঞানী বলে, ''বাছা স্বজন-বিমুখ
হৃদয় যে ঠিক তাই।''
শুধাল সে জন, ''সাগর হইতে
কে বেশি ধনবান?''
জ্ঞানী বলে, ''বাছা, তুষ্ট
হৃদয় তারো চেয়ে গরীয়ান।''
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
খাঁটি সোনা
মধুর চেয়ে আছে মধুর
সে এই আমার দেশের মাটি
আমার দেশের পথের ধূলা
খাঁটি সোনার চাইতে খাঁটি।
চন্দনেরি গন্ধভরা,
শীতল করা, ক্লান্তি-হরা
যেখানে তার অঙ্গ রাখি
সেখানটিতেই শীতল পাটি।
শিয়রে তার সূর্ এসে
সোনার কাঠি ছোঁয়ায় হেসে,
নিদ-মহলে জ্যোৎস্না নিতি
বুলায় পায়ে রূপার কাঠি।
নাগের বাঘের পাহারাতে
হচ্ছে বদল দিনে রাতে,
পাহাড় তারে আড়াল করে
সাগর সে তার ধোয়ায় পাটি।
নারিকেলের গোপন কোষে
অন্ন-পানী' যোগায় গো সে,
কোল ভরা তার কনক ধানে
আটটি শীষে বাঁধা আঁটি।
মধুর চেয়ে আছে মধুর
সে এই আমার দেশের মাটি।
শেখ ফজলুল করিম
স্বর্গ ও নরক
কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক,
কে বলে তা বহুদূর?
মানুষেরি মাঝে স্বর্গ
নরক, মানুষেতে সুরাসুর!
রিপুর তাড়নে যখনই মোদের
বিবেক পায় গো লয়,
আত্মগ্লানির নরক-অনলে
তখনি পুড়িতে হয়।
প্রীতি ও প্রেমের পূণ্য
বাঁধনে যবে মিলি পরষ্পরে,
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন
আমাদেরি কুঁড়ে ঘরে।
সুকুমার রায়
বাবুরাম সাপুড়ে
বাবুরাম সাপুড়ে,
কোথা যাস বাপুরে
আয় বাবা দেখে যা,
দুটো সাপ রেখে যা -
যে সাপের চোখ নেই,
শিং নেই, নোখ নেই,
ছোটে না কি হাঁটে না,
কাউকে যে কাটে না,
করে না কো ফোঁসফাঁস
মারে নাকো ঢুসঢাস,
নেই কোন উৎপাত,
খায় শুধু দুধভাত,
সেই সাপ জ্যান্ত,
গোটা দুই আন তো,
তেড়ে মেরে ডাণ্ডা
ক'রে দিই ঠাণ্ডা।
প্রচলিত ছড়া
আয় আয় চাঁদ মামা
আয় আয় চাঁদ মামা
টিপ দিয়ে যা
চাঁদের কপালে চাঁদ
টিপ দিয়ে যা।
ধান ভানলে কুঁড়ো দেব
মাছ কাটলে মুড়ো দেব
কাল গাইয়ের দুধ দেব
দুধ খাবার বাটি দেব
চাঁদের কপালে চাঁদ
টিপ দিয়ে যা।
আয়রে আয় টিয়ে
নায়ে ভরা দিয়ে
না' নিয়ে গেল বোয়াল মাছে
তাই না দেখে ভোদড় নাচে
ওরে ভোদড় ফিরে চা
খোকার নাচন দেখে যা।
নোটন নোটন পায়রাগুলি
ঝোটন বেঁধেছে
ওপারেতে ছেলেমেয়ে
নাইতে নেমেছে।
দুই ধারে দুই রুই কাতলা
ভেসে উঠেছে
কে দেখেছে কে দেখেছে
দাদা দেখেছে
দাদার হাতে কলম ছিল
ছুঁড়ে মেরেছে
উঃ বড্ড লেগেছে।
খোকা ঘুমাল পাড়া জুড়াল
খোকা ঘুমাল পাড়া জুড়াল বর্গী এল দেশে
বুলবুলিতে ধান খেয়েছ, খাজনা দেব কিসে?
ধান ফুরাল, পান ফুরাল, খাজনার উপায় কী?
আর কটা দিন সবুর কর, রসুন বুনেছি।
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এল বান,
শিব ঠাকুরের বিয়ে হল তিন কন্যা দান।
এক কন্যা রাঁধেন বাড়েন এক কন্যা খান,
এক কন্যা রাগ করে বাপের বাড়ি যান।
সুকুমার রায়
বিষম চিন্তা
মাথায় কত
প্রশ্ন আসে,
দিচ্ছে না
কেউ জবাব
তার
সবাই বলে,
''মিথ্যে বাজে
বকিসনে আর
খবরদার!''
অমন ধারা
ধমক দিলে
কেমন করে
শিখব সব?
বলবে সবাই
''মুখ্য ছেলে'',
বলবে আমায়
''গো গর্দভ!''
কেউ কি
জানে দিনের
বেলায় কোথায়
পালায় ঘুমের
ঘোর?
বর্ষা হলেই
ব্যাঙের গলায়
কোত্থেকে হয়
এমন জোর?
গাধার কেন
শিং থাকে
না, হাতির
কেন পালক
নেই?
গরম তেলে
ফোড়ন দিলে
লাফায় কেন
তা ধেই
ধেই/
সোডার বোতল
খুললে কেন
ফসফসিয়ে রাগ
করে?
কেমন করে
রাখবে টিকি
মাথার যাদের
টাক পড়ে?
ভূত যদি
না থাকবে
তবে কোত্থেকে
হয় ভূতের
ভয়?
মাথায় যাদের
গোল বেঁধেছে
তাদের কেন
''পাগোল'' কয়?
কতই ভাবি
এসব কথার
জবাব দেবার
মানুষ কই?
বয়স হলে
কেতাব খুলে
জানতে পাব
সমস্তই।
খান মুহাম্মদ মইনুদ্দীন
কানা বগীর
ছা
ঐ দেখা
যায় তাল
গাছ
ঐ আমাদের
গাঁ।
ঐ খানেতে
বাস করে
কানা বগীর
ছা।
ও বগী
তুই খাস
কি?
পানতা ভাত
চাস কি?
পানতা আমি
খাই না
পুঁটি মাছ
পাই না
একটা যদি
পাই
অমনি ধরে
গাপুস গুপুস
খাই।
সুনির্মল বসু
সবার আমি
ছাত্র
আকাশ আমায়
শিক্ষা দিল
উদার হতে
ভাই রে,
কর্মী হবার
মন্ত্র আমি
বায়ুর কাছে
পাই রে।
পাহাড় শিখায়
তাহার সমান-
হই যেন
ভাই মৌন-মহান,
খোলা মাঠের
উপদেশে-
দিল-খোলা
হই তাই
রে।
সূর্য আমায়
মন্ত্রণা দেয়
আপন তেজে
জ্বলতে,
চাঁদ শিখাল
হাসতে মোরে,
মধুর কথা
বলতে।
ইঙ্গিতে তার
শিখায় সাগর-
অন্তর হোক
রত্ন-আকর;
নদীর কাছে
শিক্ষা পেলাম
আপন বেগে
চলতে।
মাটির কাছে
সহিষ্ণুতা
পেলাম আমি
শিক্ষা,
আপন কাজে
কঠোর হতে
পাষান দিল
দীক্ষা।
ঝরনা তাহার
সহজ গানে,
গান জাগাল
আমার প্রাণে;
শ্যাম বনানী
সরসতা
আমায় দিল
ভিক্ষা।
বিশ্বজোড়া পাঠশালা
মোর,
সবার আমি
ছাত্র,
নানান ভাবে
নতুন জিনিস
শিখছি দিবারাত্র।
এই পৃথিবীর
বিরাট খাতায়,
পাঠ্য যেসব
পাতায় পাতায়
শিখছি সে
সব কৌতূহলে,
নেই দ্বিধা
লেশমাত্র।
সুফিয়া কামাল
আজিকার শিশু
আমাদের যুগে
আমরা যখন
খেলেছি পুতুল
খেলা
তোমরা এ
যগে সেই
বয়সেই লেখাপড়া
কর মেল।
আমরা যখন
আকাশের তলে
ওড়ায়েছি শুধু
ঘুড়ি
তোমরা এখন
কলের জাহাজ
চালাও গগন
জুড়ি।
উত্তর মেরু,
দক্ষিণ মেরু
সব তোমাদের
জানা
আমরা শুনেছি
সেখানে রয়েছে
জিন ,পরী,
দেও, দানা।
পাতালপুরীর অজানা
কাহিনী তোমরা
শোনাও সবে
মেরুতে মেরুতে
জানা পরিচয়
কেমন করিয়া
হবে।
তোমাদের ঘরে
আলোর অভাব
কভূ নাহি
হবে আর
আকাশ-আলোক
বাঁধি আনি
দূর করিবে
অন্ধকার।
শস্য-শ্যামলা
এই মাটি
মা'র
অঙ্গ পুষ্ট
করে
আনিবে অটুট
স্বাস্থ্য, সবল দেহ-মন ঘরে
ঘরে।
তোমাদের গানে,
কল-কলতানে
উছসি উঠিবে
নদী-
সরস করিয়া
তৃণ ও
তরুরে বহিবে
সে নিরবধি
তোমরা আনিবে
ফুল ও
ফসল পাখি-ডাকা রাঙা
ভোর
জগৎ করিবে
মধুময়, প্রাণে
প্রাণে বাঁধি
প্রীতিডোর।
সুফিয়া কামাল
হেমন্ত
সবুজ পাতার
খামের ভেতর
হলুদ গাঁদা
চিঠি লেখে
কোন্ পাথারের
ওপার থেকে
আনল ডেকে
হেমন্তকে?
আনল ডেকে
মটরশুঁটি,
খেসারি আর
কলাই ফুলে
আনল ডেকে
কুয়াশাকে
সাঁঝ সকালে
নদীর কূলে।
সকাল বেলায়
শিশির ভেজা
ঘাসের ওপর
চলতে গিয়ে
হাল্কা মধুর
শীতের ছোঁয়ায়
শরীর ওঠে
শিরশিরিয়ে।
আরও এল
সাথে সাথে
নুতন গাছের
খেজুর রসে
লোভ দেখিয়ে
মিষ্টি পিঠা
মিষ্টি রোদে
খেতে বসে।
হেমন্ত তার
শিশির ভেজা
আঁচল তলে
শিউলি বোঁটায়
চুপে চুপে
রং মাখাল
আকাশ থেকে
ফোঁটায় ফোঁটায়।
আ.ন.ম. বজলুর রশীদ
আমাদের দেশ
আমাদের দেশ
তারে কত
ভালবাসি
সবুজ ঘাসের
বুকে শেফালির
হাসি,
মাঠে মাঠে
চরে গরু
নদী বয়ে
যায়
জেলে ভাই
ধরে মাছ
মেঘের ছায়ায়।
রাখাল বাজায়
বাঁশি কেটে
যায় বেলা
চাষী ভাই
করে চাষ
কাজে নেই
হেলা।
সোনার ফসল
ফলে ক্ষেত
ভরা ধান
সকলের মুখে
হাসি, গান
আর গান।
ফররুখ আহমদ
বৃষ্টির ছড়া
বিষটি এল
কাশ বনে
জাগল সাড়া
ঘাস বনে,
বকের সারি
কোথা রে
লুকিয়ে গেল
বাঁশ বনে।
নদীতে নাই
খেয়া যে,
ডাকল দূরে
দেয়া যে,
কোন সে
বনের আড়ালে
ফুটল আবার
কেয়া যে।
গাঁয়ের নামটি
হাটখোলা,
বিষটি বাদল
দেয় দোলা,
রাখাল ছেলে
মেঘ দেখে,
যায় দাঁড়িয়ে
পথ-ভোলা।
মেঘের আঁধার
মন টানে,
যায় সে
ছুটে কোন
খানে,
আউশ ধানের
মাঠ ছেড়ে
আমন ধানের
দেশ পানে।
ফররুখ আহমদ
ঝুমকো জবা
ঝুমকো জবা বনের দুল
উঠল ফুটে বনের ফুল।
সবুজ পাতা ঘোমটা খোলে,
ঝুমকো জবা হাওয়ায় দোলে।
সেই দুলুনির তালে তালে,
মন উড়ে যায় ডালে ডালে।
রোকনুজ্জামান খান
বাক্ বাক্
কুম
বাক্ বাক্
কুম পায়রা
মাথায় দিয়ে
টায়রা
বউ সাজবে
কাল কি?
চড়বে সোনার
পালকি?
পালকি চলে
ভিন গাঁ-
ছয় বেহারার
তিন পা।
পায়রা ডাকে
বাকুম বাক্
তিন বেহারার
মাথায় টাক।
বাক্ বাকুম
কুম্ বাক্
বাকুম
ছয় বেহারার
নামলো ঘুম।
থামলো তাদের
হুকুম হাঁক
পায়রা ডাকে
বাকুম্ বাক্।
ছয় বেহারা
হুমড়ি খায়
পায়রা উড়ে
কোথায় যায়?
রোকনুজ্জামান খান
গাধার কান
একটা দড়ির
দুদিক থেকে
টানছে দুদল
ছেলে
তাই না
দেখে বনের
বানর লাফায়
খেলা ফেলে।
সকল বানর
ফন্দি আঁটে
জবর মজার
খেলা
এমন খেলা
খেলেই সবাই
কাটিয়ে দেব
বেলা।
কিন্তু দড়ি
মিলবে কোথায়?
ঘাবড়ে গেল
মাথা
পালের সেরা
বানর বলে
মগজ তোদের
যা-তা।
নেইকো দড়ি
বয়েই গেল
ভাবিস মিছে
হাবা
লেজে লেজে
ধরব টেনে
হবে দড়ির
বাবা।
যেইনা বলা
দুদল বানর
দুদিক থেকে
বসে
একের লেজটি
ধরল টেনে
জোরসে চেপে
কষে।
বনের গাধা
দাঁড়ায় মাঝে
উঁচিয়ে দু'টি কান
বলে, আমার
দুদিক থেকে
কান ধরে
দে টান
কান ধরে
এই মাথা
নিবি আপন
দলে টেনে
জিতবি তবে
এই খেলাতে,
রাখিস সবাই
জেনে।
অমনি দুদল
হেঁইয়ো টানে-
গাধার বিপদ
ভারি
কান ছিঁড়ে
সব হুমড়ি
খেয়ে পড়ল
সারি সারি
সাঙ্গ হল
দড়ির খেলা
বানররা সব
হাসে
কান হারিয়ে
গাধা শুধুই
চোখের জলে
ভাসে।
আল মাহমুদ
নোলক
আমার মায়ের
সোনার নোলক
হারিয়ে গেল
শেষে
হেথায় খুঁজি
হোথায় খুঁজি
সারা বাংলাদেশে।
নদীর কাছে
গিয়েছিলাম, আছে তুমার কাছে?
-হাত দিও
না আমার
শরীর ভরা
বোয়াল মাছে।
বললো কেঁদে
তিতাস নদী
হরিণবেড়ের বাঁকে
শাদা পালক
বকরা যেথায়
পাখ ছাড়িয়ে
থাকে।
জল ছাড়িয়ে
দল হারিয়ে
গেলাম বনের
দিক
সবুজ বনের
হরিৎ টিয়ে
করে রে
ঝিকমিক
বনের কাছে
এই মিনতি,
ফিরিয়ে দেবে
ভাই,
আমার মায়ের
গয়না নিয়ে
ঘরেক যেতে
চাই।
কোথায় পাবো
তোমার মায়ের
হারিয়ে যাওয়া
ধন
আমরা তো
সব পাখপাখালি
বনের সাধারণ।
সবুজ চুলে
ফুল পিন্দেছি
নোলক পরি
না তো।
ফুলের গন্ধ
চাও যদি
নাও, হাত
পাতো হাত
পাতো-
বলে পাহাড়
দেখায় তাহার
আহার ভরা
বুক।
হাজার হরিণ
পাতার ফাঁকে
বাঁকিয়ে রাখে
মুখ।
এলিয়ে খোঁপা
রাত্রি এলেন,
ফের বাড়ালাম
পা
আমার মায়ের
গয়না ছাড়া
ঘরকে যাবো
না।।
আল মাহমুদ
ভর দুপুরে
মেঘনা নদীর
শান্ত মেয়ে
তিতাসে
মেঘের মত
পাল উড়িয়ে
কী ভাসে!
মাছের মত
দেখতে এ
কোন পাটুনি
ভর দুপুরে
খাটছে সখের
খাটুনি।
ওমা এ-যে কাজল
বিলের বোয়ালে
পালের দড়ি
আটকে আছে
চোয়ালে
আসছে ধেয়ে
লম্বা দাড়ি
নাড়িয়ে,
ঢেউয়ের বাড়ি
নাওয়ের সারি
ছাড়িয়ে।
কোথায় যাবে
কোন উজানে
ও-মাঝি
আমার কোলে
খোকন নামের
যে-পাজি
হাসেছ, তারে
নাও না
তোমার নায়েতে
গাঙ-শুশুকের
স্বপ্নভরা গাঁয়েতে;
সেথায় নাকি
শালুক পাতার
চাদরে
জলপিপিরা ঘুমায়
মহা আদরে,
শাপলা ফুলের
শীতল সবুজ
পালিশে
থাকবে খোকন
ঘুমিয়ে ফুলের
বালিশে।
হরিশচন্দ্র মিত্র
সময়
খেলায় মজিয়া শিশু কাটায়ো
না বেলা
সময়ের প্রতি কভু করিও
না হেলা।
আজি যে সময় গত হইল তোমার
আসিবে না পুনঃ তাহা আসিবে
না আর।
তাই বলি বৃথা কাল করিও
না ক্ষয়
আপনার কাজ কর থাকিতে সময়।
বড় কে
আপনারে বড়
বলে, বড়
সেই নয়
লোকে যারে
বড় বলে
বড় সেই
হয়।
বড় হওয়া
সংসারেতে কঠিন
ব্যাপার
সংসারে সে
বড় হয়,
বড় গুণ
যার।
গুণেতে হইলে
বড়, বড়
বলে সবে
বড় যদি
হতে চাও,
ছোট হও
তবে।
পরিচ্ছদ
মহামূল্য পরিচ্ছদ,
রতন ভূষণ,
নরের মহত্ত্ব
নারে করিতে
বর্ধন।
জ্ঞান-পরিচ্ছদ,
আর ধর্ম-অলঙ্কার,
করে মাত্র
মানুষের মহত্ত্ব
বিস্তার।
নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য
কাজের লোক
“মৌমাছি, মৌমাছি,
কোথা যাও
নাচি' নাচি'
দাঁড়াও না
একবার ভাই।''
“ওই ফুল
ফোটে বনে,
যাই মধু
আহরণে
দাঁড়াবার সময়
তো নাই।''
“ছোট পাখি,
ছোট পাখি,
কিচি-মিচি
ডাকি ডাকি'
কোথা যাও
বলে যাও
শুনি?''
“এখন না
ক'ব
কথা,
আনিয়াছি তৃণলতা,
আপনার বাসা
আগে বুনি।''
পিপীলিকা, পিপীলিকা,দল-বল
ছাড়ি একা
কোথা যাও,
যাও ভাই
বলি।''
“শীতের সঞ্চয়
চাই,
খাদ্য খুঁজিতেছি
তাই
ছয় পায়ে
পিল পিল
চলি।''
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
নন্দলাল
নন্দলাল তো
একদা একটা
করিল ভীষণ
পণ -
স্বদেশের তরে,
যা করেই
হোক, রাখিবেই
সে জীবন।
সকলে বলিল,
'আ-হা-হা কর
কি, কর
কি, নন্দলাল?'
নন্দ বলিল,
'বসিয়া বসিয়া
রহিব কি
চিরকাল?
আমি না
করিলে কে
করিবে আর
উদ্ধার এই
দেশ?'
তখন সকলে
বলিল- 'বাহবা
বাহবা বাহবা
বেশ।'
নন্দর ভাই
কলেরায় মরে,
দেখিবে তারে
কেবা!
সকলে বলিল,
'যাও না
নন্দ, করো
না ভায়ের
সেবা'
নন্দ বলিল,
ভায়ের জন্য
জীবনটা যদি
দিই-
না হয়
দিলাম, -কিন্তু
অভাগা দেশের
হইবে কি?
বাঁচাটা আমার
অতি দরকার,
ভেবে দেখি
চারিদিক'
তখন সকলে
বলিল- 'হাঁ
হাঁ হাঁ,
তা বটে,
তা বটে,
ঠিক।'
নন্দ একদা
হঠাৎ একটা
কাগজ করিল
বাহির,
গালি দিয়া
সবে গদ্যে,
পদ্যে বিদ্যা
করিল জাহির;
পড়িল ধন্য
দেশের জন্য
নন্দ খাটিয়া
খুন;
লেখে যত
তার দ্বিগুণ
ঘুমায়, খায়
তার দশ
গুণ;
খাইতে ধরিল
লুচি ও
ছোকা ও
সন্দেশ থাল
থাল,
তখন সকলে
বলিল- 'বাহবা
বাহবা, বাহবা
নন্দলাল।'
নন্দ একদা
কাগজেতে এক
সাহেবকে দেয়
গালি;
সাহেব আসিয়া
গলাটি তাহার
টিপিয়া ধরিল
খালি;
নন্দ বলিল,
'আ-হা-হা! কর
কি, কর
কি! ছাড়
না ছাই,
কি হবে
দেশের, গলাটিপুনিতে
আমি যদি
মারা যাই?
বলো কি'
বিঘৎ নাকে
দিব খত
যা বলো
করিব তাহা।'
তখন সকলে
বলিল – 'বাহবা
বাহবা বাহবা
বাহা!'
নন্দ বাড়ির
হ'ত
না বাহির,
কোথা কি
ঘটে কি
জানি;
চড়িত না
গাড়ি, কি
জানি কখন
উল্টায় গাড়িখানি,
নৌকা ফি-সন ডুবিছে
ভীষণ, রেলে
'কলিসন' হয়;
হাঁটতে সর্প,
কুকুর আর
গাড়ি-চাপা
পড়া ভয়,
তাই শুয়ে
শুয়ে, কষ্টে
বাঁচিয়ে রহিল
নন্দলাল
সকলে বলিল-
'ভ্যালা রে
নন্দ, বেঁচে
থাক্ চিরকাল।'
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
ধনধান্য পুষ্পভরা
ধন্যধান্য পুষ্পভরা
আমাদের এই
বসুন্ধরা;
তাহার মাঝে
আছে দেশ
এক- সকল
দেশের সেরা;
ওসে স্বপ্ন
দিয়ে তৈরি
সে দেশ
স্মৃতি তিয়ে
ঘেরা;
এমন দেশটি
কোথাও খুঁজে
পাবে নাকো
তুমি,
সকল দেশের
রানী সে
যে- আমার
জন্মভূমি।
চন্দ্র-সূর্য
গ্রহ তারা,
কোথায় উজল
এমন ধারা!
কোথায় এমন
খেলে তড়িৎ
এমন কালো
মেঘে!
তারা পাখির
ডাকে ঘুমিয়ে,
ওঠে পাখির
ডাকে জেগে,
এমন দেশটি
কোথাও খুঁজে
পাবে নাকো
তুমি
সকল দেশের
রানী সে
যে- আমার
জন্মভূমি।
এমন স্নিগ্ধ
নদী কাহার,
কোথায় এমন
ধুম্র পাহাড়;
কোথায় এমন
হরিৎক্ষেত্র আকাশ তলে মেশে।
এমন ধানের
ওপর ঢেউ
খেলে যায়
বাতাস কাহার
দেশে।
এমন দেশটি
কোথাও খুঁজে
পাবে নাকো
তুমি
সকল দেশের
রানী সে
যে- আমার
জন্মভূমি।
পুষ্পে পুষ্পে
ভরা শাখী;
কুঞ্জে কুঞ্জে
গাহে পাখি
গুঞ্জরিয়া আসে
অলি পুঞ্জে
পুঞ্জে ধেয়ে-
তারা ফুলের
ওপর ঘুমিয়ে
পড়ে ফুলের
মধু খেয়ে।
ভায়ের মায়ের
এমন স্নেহ
কোথায় গেলে
পাবে কেহ?
- ওমা তোমার
চরণ দুটি
বক্ষে আমার
ধরি,
আমার এই
দেশেতে জন্ম
যেন এই
দেশেতে মরি-
এমন দেশটি
কোথাও খুঁজে
পাবে নাকো
তুমি
সকল দেশের
রানী সে
যে- আমার
জন্মভূমি।
রজনীকান্ত সেন
স্বাধীনতার সুখ
বাবুই পাখিরে
ডাকি, বলিছে
চড়াই-
“কুঁড়ে ঘরে
থেকে কর
শিল্পের বড়াই;
আমি থাকি
মহাসুখে অট্টালিকা
'পরে,
তুমি কত
কষ্ট পাও
রোদ, বৃষ্টি,
ঝড়ে।''
বাবুই হাসিয়া
কহে- “সন্দেহ
কি তায়?
কষ্ট পাই,
তবু থাকি
নিজের বাসায়;
পাকা হোক,
তবু ভাই,
পরের ও
বাসা,
নিজ হাতে
গড়া মোর
কাঁচা ঘর,
খাসা।''
রজনীকান্ত সেন
পরোপকার
নদী কভু
পান নাহি
করে নিজ
জল,
তরুগণ নাহি
খায় নিজ
নিজ ফল,
গাভী কভু
নাহি করে
নিজ দুগ্ধ
পান,
কাষ্ঠ, দগ্ধ
হয়ে, করে
পরে অন্নদান,
স্বর্ণ করে
নিজরূপে অপরে
শোভিত,
বংশী করে
নিজস্বরে অপরে
মোহিত,
শস্য জন্মাইয়া,
নাহি খায়
জলধরে,
সাধুর ঐশ্বর্য
শুধু পরহিত-তরে।
কুসুমকুমারী দাশ
আদর্শ ছেলে
আমাদের দেশে
সেই ছেলে
কবে হবে
কথায় না
বড় হয়ে
কাজে বড়
হবে?
মুখে হাসি
বুকে বল,
তেজে ভরা
মন
'মানুষ হইতে
হবে'- এই
তার পণ।
বিপদ আসিলে
কাছে হও
আগুয়ান
নাই কি
শরীরে তব
রক্ত, মাংস,
প্রাণ?
হাত পা
সবারই আছে,
মিছে কেন
ভয়?
চেতনা রয়েছে
যার, সে
কি পড়ে
রয়?
সে ছেলে
কে চাই
বল, কথায়
কথায়
আসে যার
চোখে জল,
মাথা ঘুরে
যায়?
মনে প্রাণে
খাট সবে,
শক্তি কর
দান,
তোমরা 'মানুষ'
হলে দেশের
কল্যাণ।
শেখ হাবিবুর রহমান
নবীর শিক্ষা
তিন দিন
হ'তে
খাইতে না
পাই, নাই
কিছু মোরে
ঘরে,
দারা পরিবার
বাড়িতে আমার
উপোস করিয়া
মরে।
নাহি পাই
কাজ তাই
ত্যাজি লাজ
বেড়াই ভিক্ষা
করি,
হে দয়াল
নবী, দাও
কিছু মোরে
নহিলে পরাণে
মরি।'
আরবের নবী,
করুণার ছবি
ভিখারির পানে
চাহি,
কোমল কণ্ঠে
কহিল, -'তোমার
ঘরে কি
কিছুই নাহি?'
বলিল সে,
'আছে শুধু
মোর কম্বল
একখানি।'
কহিল রসুল,
'এক্ষণি গিয়া
দাও তাহা
মোরে আনি।'
সম্বল তার
কম্বলখানি বেচিয়া তাহার করে,
অর্ধেক দাম
দিলেন রসুল
খাদ্য কেনার
তরে,
বাকি টাকা
দিয়া কিনিয়া
কুঠার, হাতল
লাগায়ে নিজে,
কহিলেন, 'যাও
কাঠ কেটে
খাও, দেখ
খোদা করে
কি-যে।'
সেদিন হইতে
শ্রম সাধনায়
ঢালিল ভিখারি
প্রাণ,
বনের কাষ্ঠ
বাজারে বেচিয়া
দিন করে
গুজরান।
অভাব তাহার
রহিল না
আর, হইল
সে সুখী
ভবে,
নবীর শিক্ষা
ক'রো
না ভিক্ষা,
মেহনত কর
সবে।
গোলাম মোস্তফা
শিশুর পণ
এই করিনু
পণ
মোরা এই
করিনু পণ
ফুলের মতো
গড়ব মোরা
মোদের এই
জীবন।
হাসব মোরা
সহজ সুখে
গন্ধ রবে
লুকিয়ে বুকে
মোদের কাছে
এলে সবার
জুড়িয়ে যাবে
মন।
নদী যেমন
দুই কূলে
তার
বিলিয়ে চলে
জল,
ফুটিয়ে তোলে
সবার তরে
শস্য, ফুল
ও ফল।
তেমনি করে
মোরাও সবে
পরের ভাল
করব ভবে
মোদের সেবায়
উঠবে হেসে
এই ধরণীতল।
সূর্য যেমন
নিখিল ধরায়
করে কিরণ
দান,
আঁধার দূরে
যায় পালিয়ে
জাগে পাখির
গান।
তেমনি মোদের
জ্ঞানের আলো
দূর করিবে
সকল কালো
উঠবে জেগে
ঘুমিয়ে আছে
যে সব
নীরব প্রাণ।
গোলাম মোস্তফা
বনভোজন
নুরু, পুশি,
আয়েশা, শফি
সবাই এসেছে
আম বাগিচার
তলায় যেন
তারা হেসেছে।
রাঁধুনিদের শখের
রাঁধার পড়ে
গেছ ধুম,
বোশেখ মাসের
এই দুপুরে
নাইকো কারো
ঘুম।
বাপ মা
তাদের ঘুমিয়ে
আছে এই
সুবিধা পেয়ে,
বনভোজনে মিলেছে
আজ দুষ্টু
কটি মেয়ে।
বসে গেছে
সবাই আজি
বিপুল আয়োজনে,
ব্যস্ত সবাই
আজকে তারা
ভোজের নিমন্ত্রণে।
কেউবা বসে
হলদি বাটে
কেউবা রাঁধে
ভাত,
কেউবা বলে
দুত্তুরি ছাই
পুড়েই গেল
হাত।
বিনা আগুন
দিয়েই তাদের
হচ্ছে যদিও
রাঁধা,
তবু সবার
দুই চোখেতে
ধোঁয়া লেগেই
কাঁদা।
কোর্মা পোলাও
কেউবা রাঁধে,
কেউবা চাখে
নুন,
অকারণে বারে
বারে হেসেই
বা কেউ
খুন।
রান্না তাদের
শেষ হল
যেই, গিন্নী
হল নুরু,
এক লাইনে
সবাই বসে
করলে খাওয়া
শুরু।
ধূলোবালির কোর্মা-পোলাও আর
সে কাদার
পিঠে,
মিছিমিছি খেয়া
সবাই, বলে-
বেজায় মিঠে।
এমন সময়
হঠাৎ আমি
যেই পড়েছি
এসে,
পালিয়ে গেল
দুষ্টুরা সব
খিলখিলিয়ে হেসে।
আহসান হাবীব
মেঘনা পাড়ের
ছেলে
আমি মেঘনা
পাড়ের ছেলে
আমি মেঘনা
নদীর নেয়ে।
মেঘনা নদীর
ঢেউয়ের বুকে
তালের নৌকা
বেয়ে
আমি বেড়াই
হেসে খেলে-
আমি মেঘনা
পাড়ের ছেলে।
মেঘনা নদীর
নেয়ে আমি
মেঘনা পাড়ে
বাড়ি
ইচ্ছে হ'লেই এপার
থেকে ওপারে
দেই পাড়ি।
তালে তালে
তালের নৌকা
দু'হাতে
যাই বেয়ে
আমি মেঘনা
নদীর নেয়ে।
পাহাড় সমান
ঢেউয়ের বুকে
নৌকো আমার
ভাসে
মেঘমুলুকের পাহাড়
থেকে ঝড়ের
ঝাপটা আসে-
মাথার ওপর
মুচকি হাসে
বিজলি নামের
মেয়ে
আমি মেঘনা
নদীর নেয়ে।
আমার ঢেউয়ের
সঙ্গে গলাগলি
ঢেউয়ের সঙ্গে
খেলা
ঝড়ের সঙ্গে
লড়াই ক'রে কাটাই
সারাবেলা।
দেশ থেকে
যাই দেশান্তরে
মনের নৌকা
বেয়ে-
আমি মেঘনা
নদীর ছেলে
আমি মেঘনা
নদীর নেয়ে।
আমাদের দেশ
বজলুর
রশীদ
আমাদের
দেশ তারে
কত ভালবাসি
সবুজ ঘাসের বুকে শেফালির হাসি,
মাঠে মাঠে চরে গরু নদী বয়ে যায়
জেলে ভাই ধরে মাছ মেঘের ছায়ায়।
রাখাল বাজায় বাঁশি কেটে যায় বেলা
চাষী ভাই করে চাষ কাজে নেই হেলা।
সোনার ফসল ফলে ক্ষেত ভরা ধান
সকলের মুখে হাসি, গান আর গান।
সবুজ ঘাসের বুকে শেফালির হাসি,
মাঠে মাঠে চরে গরু নদী বয়ে যায়
জেলে ভাই ধরে মাছ মেঘের ছায়ায়।
রাখাল বাজায় বাঁশি কেটে যায় বেলা
চাষী ভাই করে চাষ কাজে নেই হেলা।
সোনার ফসল ফলে ক্ষেত ভরা ধান
সকলের মুখে হাসি, গান আর গান।
শ্বেতপদ্ম
মোহাম্মদ
খালিদ উমর
নিশিদিন পড়ে মনে
তাল নারকেল সুপারি বনে
অনুরাগে ডাকে আকাশ ধরণী
হেমন্ত ছড়ায় শিশির মাখা চাঁদনী।
দিঘীর জলে ঝিকিমিকি ঢেউ করে ছোটাছুটি
সারিতে সাজানো আমড়া পেয়ারা মটর সুটি।
আল ধরে চলে ছোট্ট শিশু গুটিগুটি
কোয়ালা কোকিলা কাজরী গায় শোনে বনানী
কি মায়া ছড়াল পথের ধারে শিরিষ মেহগনি।
হর্তুকি হিজল হরিদ্রা বনের হাতছানি
দেখে জুড়ায় আমার এ শূন্য বুক খানি।
জীবনটা হয় যেখানে শ্বেত পদ্ম কবিতা
সে দেশের মাটি যে আমার মনমিতা।
বাংলার রূপ
মোহাম্মদ খালিদ উমর
মোহাম্মদ খালিদ উমর
মেঘনা যমুনা পদ্মার সঙ্গমে
দেখেছি বাংলার রূপ
নীল শাড়ী পরা গায়ের বধূ
জ্বালায় সুগন্ধি ধূপ
সাঁঝের বেলা দেখো মাটির ঘরে।
মেঘনা নদীর মোহনায় দুপুরে
রেখেছে ঘিরে বালুচরে মেঘের ছায়ায়
ঢেউ জাগে ঝিকিমিকি উত্তাল সাগরে।
এখানে পাখি ডাকে নদীর তীরে
দামাল ছেলে মাখে পথের ধুলা
সাম্পান মাঝী গান গেয়ে ভিড়ে
কভু যায় কি তাকে ভোলা।
নীলিমা সুদূর সীমানায়
সোনালী সূর্য উকি দেয়
রাঙ্গা মাটির ওই পাহাড়ে
দেখ ভাই নবীন সাথী ঘুম থেকে জেগে।
এই তো আমার সোনার বাংলা
মোহাম্মদ খালিদ উমর
মোহাম্মদ খালিদ উমর
বাংলার রূপ আমি খুঁজে পেয়েছি
চোখ জুড়ানো সবুজ বনে
স্বর্ণলতা দোলে কুঞ্জবনে পাখির গানে
প্রভাতে সূর্য উঠে গায়ের বাঁকে রক্ত লাল।
বটের ছায়ায় রাখালি বাঁশী বাজে ওই দূরে
জীবন পেয়েছি গানের সুরে
নদীর বাঁকে ভেসে যায় মাঝি তুলে পাল।
চৈতি দুপুরে চাতক পাখি
গগনে চেয়ে থাকে মেলে আঁখি
কল্পনা জাল বুনে গায়ের বধূ
আঁখির কোনে লয়ে হৃদয় মধু।
মেঠো পথের পাড়ে নীলিমার প্রান্ত ছুঁয়ে
সবুজ বনানী থাকে আকাশ পানে চেয়ে
চঞ্চল বসন্ত ছড়ায় শিমুল পলাশের লাল।
সমর্পণ
মোহাম্মদ খালিদ উমর
মোহাম্মদ খালিদ উমর
হে সত্য সুন্দর শক্তি
তোমার সাধনায় সমর্পণ করেছি আমাকে
এই বিশ্বের, মহা বিশ্বের কোন সুদূরে রয়েছ
তুমি?
মগ্ন তোমার প্রেমে আমি
তাই খর্ব কর যত অহংকার আমার
তোমার ধ্যানে মগ্ন জীবাত্মা করে হাহাকার।
দুর্বার মোহে মেটাতে মনের জ্বালা
ক্ষণিকের তরে দেখা দাও শুধু, শুধু একবার।
মর্ত্যের পরে সীমাহীন শূন্যে
অনন্ত অন্তহীন তুমি।
পরশে তোমার
শুভ্র, শীতল, শান্ত
সিক্ত হবে আমার চিত্ত।
তোমার সুরে সুরে আমার মনো বীণা হবে
একাকার।
তোমার আমার এই বিরহের
হোক তবে অবসান
তোমার আমার মিলনের ঘটা হোক চির অম্লান।
থেকো নাকো আর লুকিয়ে তুমি অনন্ত তিমিরে
আমার সাধনা, আমার ধ্যান হয়নি কি সারা?
আমার আমি আর নেই যে আমাতে
তোমাতে করেছি বিলীন
অনুভবে দেখি যেন তাই
আমি রয়েছি তোমার মাঝে
তোমাকেই ভালোবেসে, তোমাতে হয়েছি লীন।
দয়া কর হে প্রভু
মোহাম্মদ
খালিদ উমর
হে করুণাময় পরওয়ারদিগার
আমি গুনাহগার বান্দা তোমার।
লা শরীক তুমি নিরাকার মহান
রসুলে হাবিব তোমার প্রিয় আদম সন্তান।
সবার সেরা তুমি শিল্পী, বৈজ্ঞানিক
সবার সেরা তুমি হেকিম দার্শনিক।
চন্দ্র সূর্য নক্ষত্র গ্রহ তারা
আকাশ বাতাস নদী তন্দ্রা হারা,
দিবা নিশি গায় সবে তোমার জয়গান
অনন্ত অসীম প্রভু তুমি মহীয়ান।
পাহাড় গিরি পশু পাখি আর মেঘ বৃষ্টি
বৃক্ষলতা পুষ্প কানন তোমারই নিপুণ সৃষ্টি।
ঝর্ণাধারা শ্যামল সবুজ মেঘের ছায়া
ফুল ফসল পিতামাতার স্নেহ মায়া।
সবই দিয়েছ ভুবনে, দিয়েছ দয়ার সাগর
রহমানুর রহীম তুমি চির অমর।
তোমার ইশারায় এসেছি দুনিয়াতে
আমায় করেছ মহান মখলুকাতে।
সবই দিয়েছ প্রভু তোমার নিয়ামত
অধম আমি শুধু করি তার খিয়ানত।
দেখিয়েছ পথ নবীর দ্বারা
বারেবারে হয়েছি সে পথ হারা।
শয়তানের ছলনায় দুনিয়ার মোহে
দেখি না তোমায় জ্যোতি হীন চোখে।
অন্ধ আমি অজ্ঞান আমি নাই চেতনা
রহম তোমার পাব না বলে মনে জাগে বেদনা।
তোমার বান্দা আমি উম্মতে রসুল
ক্ষমা করে যত ভুল বন্দেগী কর হে কবুল।
চারিদিকে শুধু তোমার সারা পাই
তোমার দয়া বিনা কোন গতি নাই।
চাহি না কিছু আর এই জীবনে
ঠাই যেন পাই তোমার ভুবনে।
সুমধুর আজান
মোহাম্মদ
খালিদ উমর
হারিয়েছি ফজর ঘুমের ঘোরে
যোহর গেল সেই কোন প্রহরে।
আসরে চেয়ে দেখি আর নাই বেলা
মাগরিব গেল যখন করি খেলা
এশা যে কখন এসেছিল বুঝি নাই অন্ধ মোহে।
আমার পাপের হিসাব জমেছে কত তোমার খাতায়
হে করুণাময় পরওয়ারদিগার ক্ষমা কর তুমি আমায়।
সকল কাজ ফেলে যেন যাই ছুটে তোমারই ঘরে
দু হাত তুলে মুনাজাত করি যেন ইবাদতের পরে।
পার কর হে রহমানুর রহিম, হৃদয়ে ভাসিয়ে
দাও
তোমার নামের মহান মহিমা ভরা রহমতের নাও।
রুধির ধারা বহিয়ে দাও তোমার প্রেমের স্রোতে
মরমে বেধে সুর আজানের মাঝে সন্ধ্যা প্রভাতে।
যে সুর তুমি দিয়েছ আজানের মাঝে ধরণীর পরে
সেই সুর বাজুক দিনমান আমার প্রাণে আমার ঘরে।
তোমার আমি যেন পাই আমাকে খুঁজে তোমারই মাঝে
ইবাদত বন্দেগী করি যেন দিবা নিশি আর সকাল সাঁঝে।
শয়তানের ছলনা যত আছে সব যেন চলে যায় দূরে
আজানের ধ্বনি এসে বাজুক আমার বুকে সুমধুর সুরে।
শুকতারা-মোহাম্মদ
খালিদ উমর
মাগো আমার সোনামণি আমার চোখের আলো
জানিস না তুই তোকে আমি কতই বাসি ভালো।।
তুই যে আমার জীয়ন কাঠি আমার পথের দিশা
দেখলে তোকে মন জুড়ায় আর কাটে অমানিশা,
তোরই ছায়া যেন আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিলো।।
তোকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি অনেক বড় হবি
সবার চোখে একে দিবি মন জুড়ানো ছবি,
তোরই সাথে যেন ঘড়ে চাদের কণা এলো।।
হিরের খনি-মোহাম্মদ
খালিদ উমর
চাঁদ হাসে তারা হাসে হাসে খুকুমণি
আমার ঘড়ে এলো বুঝি ছোট্ট হীরের খনি।।
খুকুর চোখে আয়রে ঘুম সোনার পাল্কী চড়ে
শিউলি ফুলের মালা গেঁথে পরিয়ে দেব তোরে,
অথৈ সাগর খুঁজে দেব মনি-মুক্তা চুনি।।
লক্ষ তারার প্রদীপ জ্বেলে রূপোর নূপুর পায়ে
ঘুম পরীরা আয়রে উড়ে মেঘের দোলা নিয়ে
তোদের সাথে দোলায় শুয়ে ঘুমাক সোনামণি।।
মেঝ মনি -মোহাম্মদ
খালিদ উমর
লক্ষ্মী আমার পাগলি মা থাকিস হৃদয় জুড়ে
কোথায় গেলি সোনামণি আয়না কাছে ওরে।।
আড়াআড়ি করে শুধু কাটাস সারা বেলা
যখন ডাকি তখনই তুই করিস শুধু খেলা,
অফিস থেকে এসে আমি পাইনা খুঁজে তোরে।।
ঘুমের ঘোড়ে দেখিস শুধু ফুল কুড়ানোর স্বপ্ন
মন নেই তোর পড়াতে ভাবিস মায়ের জন্য,
ইশকুলেতে ব্যস্ত থাকিস ফিরবি কখন ঘরে।।
ঘুম পরী-মোহাম্মদ
খালিদ উমর
দিনের শেষে খুকুর চোখে আয়রে ঘুম আয়
ঘুম পরী তোর পায়ে পড়ি খুকুর চোখে আয়।।
খুকু আমার সোনার পুতুল বায়না ধরেছে
চাঁদের দেশে যাবে বলে রকেট কিনেছে,
সেই রকেটের পাখায় চড়ে আয়রে ঘুম আয়।।
চাঁদের দেশে ফুল বাগানে থাকবে খুকু একা
সন্ধ্যা হলেই জোনাক মালা জ্বলবে থোকা থোকা,
সেই আলোরই সোপান বেয়ে খুকুর চোখে আয়।।
সংকল্প-কাজি নজরুল ইসলাম
থাকব
না কো
বদ্ধ ঘরে,
দেখব এবার
জগৎটাকে, –
কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে।
দেশ হতে দেশ দেশান্তরে
ছুটছে তারা কেমন করে,
কিসের নেশায় কেমন করে মরছে যে বীর লাখে লাখে,
কিসের আশায় করছে তারা বরণ মরন-যন্ত্রণারে।।
কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে।
দেশ হতে দেশ দেশান্তরে
ছুটছে তারা কেমন করে,
কিসের নেশায় কেমন করে মরছে যে বীর লাখে লাখে,
কিসের আশায় করছে তারা বরণ মরন-যন্ত্রণারে।।
কেমন
করে বীর
ডুবুরি সিন্ধু
সেঁচে মুক্তা
আনে,
কেমন করে দুঃসাহসী চলছে উড়ে স্বর্গপানে।
জাপটে ধরে ঢেউয়ের ঝুঁটি
যুদ্ধ-জাহাজ চলছে ছুটি,
কেমন করে আনছে মানিক বোঝাই করে সিন্ধু-যানে,
কেমন জোরে টানলে সাগর উথলে ওঠে জোয়ার-বানে।
কেমন করে দুঃসাহসী চলছে উড়ে স্বর্গপানে।
জাপটে ধরে ঢেউয়ের ঝুঁটি
যুদ্ধ-জাহাজ চলছে ছুটি,
কেমন করে আনছে মানিক বোঝাই করে সিন্ধু-যানে,
কেমন জোরে টানলে সাগর উথলে ওঠে জোয়ার-বানে।
কেমন
করে মথলে
পাথার লক্ষ্মী
ওঠেন পাতাল
ফুঁড়ে,
কিসের আভিযানে মানুষ চলছে হিমালয়ের চুড়ে।
তুহিন মেরু পার হয়ে যায়
সন্ধানীরা কিসের আশায়;
হাউই চড়ে চায় যেতে কে চন্দ্রলোকের অচিন পুরে;
শুনবো আমি, ইঙ্গিত কোন ‘মঙ্গল’ হতে আসছে উড়ে।।
কিসের আভিযানে মানুষ চলছে হিমালয়ের চুড়ে।
তুহিন মেরু পার হয়ে যায়
সন্ধানীরা কিসের আশায়;
হাউই চড়ে চায় যেতে কে চন্দ্রলোকের অচিন পুরে;
শুনবো আমি, ইঙ্গিত কোন ‘মঙ্গল’ হতে আসছে উড়ে।।
কোন
বেদনায় টিকি
কেটে চণ্ডু-খোর এ
চীনের জাতি
এমন করে উদয়-বেলায় মরণ-খেলায় ওঠল মাতি।
আয়র্লণ্ড আজ কেমন করে
স্বাধীন হতে চলছে ওরে;
তুরস্ক ভাই কেমন করে কাটল শিকল রাতারাতি!
কেমন করে মাঝ-গগনে নিবল গ্রীসের সূর্য-বাতি।।
এমন করে উদয়-বেলায় মরণ-খেলায় ওঠল মাতি।
আয়র্লণ্ড আজ কেমন করে
স্বাধীন হতে চলছে ওরে;
তুরস্ক ভাই কেমন করে কাটল শিকল রাতারাতি!
কেমন করে মাঝ-গগনে নিবল গ্রীসের সূর্য-বাতি।।
রইব
না কো
বদ্ধ খাঁচায়,
দেখব এ-সব ভুবন
ঘুরে-
আকাশ-বাতাস চন্দ্র-তারায় সাগর-জলে পাহাড়-চুঁড়ে।
আমার সীমার বাঁধন টুটে
দশ দিকেতে পড়ব লুটে;
পাতাল ফেড়ে নামব নীচে, ওঠব আবার আকাশ ফুঁড়ে;
বিশ্ব- জগৎ দেখবো আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে।।
আকাশ-বাতাস চন্দ্র-তারায় সাগর-জলে পাহাড়-চুঁড়ে।
আমার সীমার বাঁধন টুটে
দশ দিকেতে পড়ব লুটে;
পাতাল ফেড়ে নামব নীচে, ওঠব আবার আকাশ ফুঁড়ে;
বিশ্ব- জগৎ দেখবো আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে।।
নজরুল
রচনাবলী, ৩য়
খণ্ড, বাংলা
একাডেমী, ঢাকা,
১৯৯৬; পৃষ্ঠা,
৫৬৭-৫৬৮।
No comments:
Post a Comment